শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫ ১০:৪৩:২৮ পিএম
সকল খবর দেশের খবর

সরকারি সহায়তা বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তে নামছে সরকার

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১০-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০১৬

২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় ৬৪ জেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তা বিতরণে দায়িত্ব পালনকারী ৬৪ জন সচিবের আমলনামা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে তাদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যাচাই কাজ চলছে। করোনাকালে লকডাউন চলাকালীন প্রান্তিক মানুষের কাছে ত্রাণ ও নগদ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা এসব সচিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারীর সময় জরুরি সেবা ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি ও সরকারি সহায়তা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক সচিব নিজেদের ইচ্ছামতো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দলের ওপর চাপ প্রয়োগের মতো অভিযোগও উঠেছে। এছাড়াও, ত্রাণ ও নগদ সহায়তা বিতরণে শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

করোনাকালে সরকার ২ কোটি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য বাজেটে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ১৫ লাখ পরিবার এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তালিকা তৈরিতে অনিয়ম এবং তথ্যভাণ্ডারের অভাবে অনেকেই সহায়তা পায়নি। এছাড়াও, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এককালীন ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়াতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, করোনাকালে ত্রাণ ও নগদ সহায়তা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা কীভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

করোনাকালে দায়িত্ব পালনকারী সচিবদের মধ্যে রয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, আইসিটি বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, গণপূর্ত সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সাবেক সচিব পবন চৌধুরী, সড়ক বিভাগের সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অ্যাকাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কাশেম, কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক সত্যব্রত সাহা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এম আলী আজম, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, বিপিএটিসির রেক্টর মো. রকিব হোসেন, যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন, রেল সচিব সেলিম রেজা, পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, সমবায় সচিব রেজাউল আহসান, মুক্তিযুদ্ধ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মৎস্য সচিব রওনক মাহমুদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা সচিব মো. আলী নূর, পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা প্রমুখ।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পরিবেশ সচিব জিয়াউল হাসান, স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, কারিগরি ও মাদরাসা সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, নৌসচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয়) সচিব মো. কামাল হোসেন, পিপিপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ, শ্রম সচিব একেএম আবদুস সালাম, আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পিএসসি সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন, দুর্যোগ সচিব মোহাম্মদ মোহসীন, সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন আল রশীদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বিমান সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জাকিয়া সুলতানা, সমাজকল্যাণ সচিব মাহফুজা আখতার, ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান, পার্বত্য সচিব মোছাম্মৎ হামিদা বেগম, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মোকাব্বির হোসেন এবং মহিলা ও শিশুসচিব সায়েদুল ইসলামও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সরকারের এই তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। করোনাকালে ত্রাণ ও নগদ সহায়তা বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।