সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের পাশে গর্ত ভরাট (ডিচ ফিলিং) প্রকল্পের মেয়াদ আর এক মাস বাকি থাকলেও কাজ হয়নি সিকিভাগও। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও ঠিকাদারদের দাবি করা অগ্রগতি প্রতিবেদনে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষার আগে কাগজে-কলমে কাজ শেষ দেখিয়ে প্রায় ২৪ কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন চলছে।
সরেজমিন ঘুরে জামালগঞ্জ উপজেলার হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় গর্তগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে। কোথাও সামান্য বালু ফেললেও অধিকাংশ স্থানে এখনো কাজই শুরু হয়নি। হাওরপারের কৃষকরা বলছেন, প্রকল্পে হাওরের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। বরং সময়ক্ষেপণ করে জনস্বার্থের টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ২০ ভাগও কাজ হয়নি। শুধু কাগজে অগ্রগতি বাড়িয়ে বরাদ্দ আত্মসাৎ করতেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। হাওরের জীববৈচিত্র্য, টেকসই বাঁধ ও কৃষিজমি রক্ষা নয়, বরং লোক দেখানো কিছু কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ভিন্নখাতে নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ উপজেলায় চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ২৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে গর্ত ভরাটের কাজ দেওয়া হয়। ঢাকার এসএস বিল্ডার্স, শাহ ড্রেজার্স, টাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ এবং নেত্রকোনার অসীম সিংহ এই কাজ করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউছুফ মিয়া বলেন, হালি হাওরের হেরাকান্দি অংশে সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে, কোনো গর্তই পুরোপুরি ভরাট হয়নি। মহালিয়া হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সিরাজুল হক তালুকদার বলেন, যেটুকু কাজ হয়েছে, তা হাওরের কোনো উপকারে আসবে না।
বেহেলী ইউপি সদস্য দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ড্রেজিংয়ের পাইপ দিয়ে শুধু পানি এসেছে, বালু আসেনি। এভাবে গর্ত ভরাট সম্ভব নয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা বাধার কথা বলা হলেও স্থানীয়রা বলছেন, এসব অজুহাত মাত্র। গুডম্যান ও অসীম সিংহের প্রতিনিধি ভজন তালুকদার দাবি করেন, ৩২ থেকে ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে।
এসএস বিল্ডার্সের প্রকৌশলী নয়ন মিয়া জানান, ১৮টি পয়েন্টের ছয়টিতে কাজ হয়েছে, ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে স্থানীয় পর্যবেক্ষণে এসব দাবির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, অনেক গর্ত ভরাট হয়েছে, বাকিগুলোও করা হবে। পানি এলেও মাটি ফেলা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় কৃষক ও হাওরসচেতন মানুষ বলছেন, হাওরের প্রকৃত উপকারের বদলে এই প্রকল্প কাগজে-কলমে সম্পন্ন দেখিয়ে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পকেট ভারী করতেই পরিচালিত হচ্ছে।