ময়মনসিংহ জেলায় জমি-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো ছিল দীর্ঘদিনের একটি বড় মাথাব্যথা। খতিয়ান জট, খারিজ ও নামজারি জটিলতা, সরকারি জমি দখলসহ নানা ভূমি অপরাধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ৩৬ নং আইন) এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা, ২০২৪-এর অধীনে প্রতিটি অধিক্ষেত্রে আলাদা আদালত গঠন করে ভূমি অপরাধ দমন ও প্রতিকারে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা আদালত, নির্দিষ্ট দিন ও ম্যাজিস্ট্রেট নতুন আইনের ২৬ ধারার ক্ষমতাবলে জেলা প্রশাসক মুফিদুল হকের নেতৃত্বে প্রতিটি অঞ্চলভিত্তিক পৃথক আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন নির্দিষ্ট সময়ে এসব আদালতে ভূমি-সম্পর্কিত মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে।
আদালত পরিচালনার সময়সূচি ও ম্যাজিস্ট্রেটরা হলেন- প্রতি সপ্তাহের রবিবার সকাল ১১ ঘটিকা হতে, মামলা নেওয়া হবে- ময়মনসিংহ সদর, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, ধোবাউড়া উপজেলার। আদালত পরিচালনাকারী বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে থাকবেন আজিম উদ্দিন, পরিচিতি নম্বর- ১৭৫৬০, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ময়মনসিংহ অথবা রেজা মোঃ গোলাম মাসুম প্রধান, পরিচিতি নম্বর- ১৭৭২৭, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ।
প্রতি সপ্তাহের সোমবার সকাল ১১ ঘটিকা হতে, মামলা নেওয়া হবে- ফুলপুর, গফরগাঁও, নান্দাইল উপজেলার। আদালত পরিচালনাকারী বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে থাকবেন লুৎফুন নাহার, পরিচিতি নম্বর- ১৭৬০৪, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা), ময়মনসিংহ অথবা উম্মে হাবীবা মীরা, পরিচিতি নম্বর- ১৭৭০৫, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ।
প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার সকাল ১১ ঘটিকা হতে, মামলা নেওয়া হবে- ভালুকা, হালুয়াঘাট, গৌরীপুর উপজেলার। আদালত পরিচালনাকারী বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে থাকবেন উম্মে হাবীবা মীরা, পরিচিতি নম্বর- ১৭৭০৫, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ অথবা লুৎফুন নাহার, পরিচিতি নম্বর- ১৭৬০৪, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা), ময়মনসিংহ।
প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার সকাল ১১ ঘটিকা হতে, মামলা নেওয়া হবে- ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, তারাকান্দা উপজেলার। আদালত পরিচালনাকারী বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে থাকবেন রেজা মোঃ গোলাম মাসুম প্রধান, পরিচিতি নম্বর- ১৭৭২৭, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ অথবা আজিম উদ্দিন, পরিচিতি নম্বর- ১৭৫৬০, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ময়মনসিংহ।
প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ নিজ উপজেলায় ভূমি-সংক্রান্ত অভিযোগ শুনানির এবং আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তির ক্ষমতা পেয়েছেন। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়েই সমস্যা সমাধান সম্ভব হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় স্বস্তির বিষয়। উল্লেখ্য যে, বর্তমান ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে ভূমি বিরোধ ও অপরাধকে ফৌজদারী আইনের অন্তর্ভুক্ত করে ১৮০ দিনের মধ্যে ভূমি সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এক বিবৃতিতে বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধে আমরা সব সময়ই সোচ্চার। বর্তমানে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালা বাস্তবায়ন হওয়ায়, ভূমি বিরোধ ও সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান হবে। এছাড়াও ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সরকারি জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। খাজনা, খারিজ, নামজারি ও মিসকেস নিষ্পত্তি তদারকিতে আমি নিজেই সক্রিয় থাকি। আমি চাই, জেলার মানুষ যেন ভূমি নিয়ে আর কোনো দুর্ভোগে না পড়ে। আমাদের লক্ষ্য- জটিলতা ও সমস্যাবিহীন আধুনিক ভূমি ব্যবস্থা।
বাড়ি-জমি নিয়ে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দেওয়ানী মামলা করে সর্বস্ব হারানো মানুষের মধ্যেও জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, ুআগে আমরা ভূমি সমস্যার সমাধান পেতাম না, এখন আমরা খুব দ্রুত ভূমি সমস্যা সমাধানে সুযোগ পাবো। প্রশাসনের এই উদ্যোগ আমাদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।” একইসঙ্গে, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই আদালতসমূহ ভূমি খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এবং দীর্ঘদিনের জটিলতাগুলো ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ভূমি অপরাধ দমন কার্যক্রম শুধু একটি প্রশাসনিক উদ্যোগ নয়- এটি একটি জনবান্ধব, মানবিক ও দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থার প্রতিফলন। ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে এটি হতে পারে দেশের অন্যান্য জেলার জন্যও একটি মডেল।