সকল খবর মহাবিশ্বের খবর

২০২৫ সালে মহাকাশ অভিযান: নতুন দিগন্তের সন্ধানে

ইন্টারনেট থেকে

প্রকাশ : ৬-২-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭৭

২০২৪ সালের মহাকাশ অভিযানগুলি আমাদের বিস্মিত করেছে নানা নতুন উদ্ভাবন এবং সফল মিশনের মাধ্যমে। নাসার ইউরোপা ক্লিপার যে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার দিকে যাত্রা করেছে, স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেটের বুস্টারগুলোর শূন্যে স্থিতি, এবং চীনের চাঙ-ই ৬ মিশনের সফলতা—এসব কেবল ছিল মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা। তবে ২০২৫ সালেও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযান আমাদের অপেক্ষা করছে।

এ বছর মহাকাশে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে, আর নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইসা) ও চীনের মতো দেশের মহাকাশ সংস্থাগুলো নানা মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য প্রস্তুত। চলুন, ২০২৫ সালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযানের দিকে এক নজর দেওয়া যাক:
চাঁদের মাটিতে সিএলপিএস

নাসার কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস (সিএলপিএস) উদ্যোগের অধীনে, ২০২৫ সালে চাঁদের মাটিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠানো হবে। এর জন্য ব্যবহার করা হবে বাণিজ্যিক ল্যান্ডার, এবং এই মিশনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হবে চাঁদের বিভিন্ন স্থানে। অ্যাস্ট্রোবোটিক, ইন্টুইটিভ মেশিনস ও ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস এই মিশনে নাসার সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। চাঁদের ভূতত্ত্ব বা চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কিত গবেষণার মাধ্যমে মঙ্গলের পরিবেশ নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।


স্ফিয়ারএক্স: মহাবিশ্বের ইতিহাসের খোঁজে

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, নাসা একটি নতুন স্পেক্ট্রোফটোমিটার উৎক্ষেপণ করবে যার নাম ‘ইপক অব রিআয়োনাইজেশন অ্যান্ড আইসেস এক্সপ্লোরার’ বা স্ফিয়ারএক্স। মহাবিশ্বের গঠন এবং তার বিবর্তনের ইতিহাস জানতে এটি মহাকাশে জরিপ করবে। বিশেষভাবে, এই মিশনটি ১০০ মিলিয়ন নক্ষত্র এবং ৪৫০ মিলিয়ন গ্যালাক্সির তথ্য সংগ্রহ করবে। এই গবেষণার মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্ম, নক্ষত্রের জন্মস্থান এবং জৈব যৌগ ও পানি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।


স্পেস রাইডার: পৃথিবীর নিম্ন-কক্ষপথ গবেষণা

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইসা ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে স্পেস রাইডার নামে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য মানবহীন নভোযান উৎক্ষেপণ করবে। এটি পৃথিবীর নিম্ন-কক্ষপথে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে। এই মিশনে মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা প্রায় ওজনহীন পরিবেশে বিভিন্ন পদার্থের আচরণ এবং জৈব প্রক্রিয়ার ওপর মহাকর্ষের প্রভাব পরীক্ষা করা হবে। চাঁদ ও মঙ্গল মিশনে ব্যবহৃত হতে পারে এমন কিছু প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হবে এ সময়।


চাঁদে জাপানের এম২/রেজিলিয়েন্স

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, জাপানের এম২/রেজিলিয়েন্স মিশন চাঁদের বুকে যাবে। এটি একটি ল্যান্ডার এবং মাইক্রো-রোভার নিয়ে চাঁদে নামবে, যার মাধ্যমে চাঁদের পানি এবং এর উপাদান নিয়ে গবেষণা চালানো হবে। বিশেষত, চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পানি বের করে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন উৎপাদনের পরীক্ষা করা হবে। এই পানি, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ভবিষ্যতের দীর্ঘকালীন চন্দ্র অভিযানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের তিয়ানান-২: গ্রহাণু গবেষণা

২০২৫ সালের মে মাসে, চীনের তিয়ানান-২ মিশন ৪৬৯২১৯ কামো’ওয়ালিওয়া গ্রহাণুতে অভিযান চালাবে এবং নমুনা সংগ্রহ করবে। এটি সৌরজগতের সূচনাকাল এবং গ্রহাণুর গঠন-কাঠামো সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে। পরে এটি একটি অন্য গ্রহাণু ৩১১পি/প্যানস্টার্স-এও অভিযানের জন্য যাবে।


অন্যান্য মহাকাশ অভিযান

এর পাশাপাশি, ইসা'র জুস মিশন বৃহস্পতির বরফচাঁদগুলোতে অভিযান চালাবে এবং নাসার লুসি মিশন বৃহস্পতির ট্রোজান গ্রহাণুগুলোতে যাবে। এছাড়া, স্পেসএক্স ২০২৫ সালে তাদের স্টারশিপ রকেটের বুস্টার ও মূল রকেট শূন্যে ধরার চেষ্টা করবে।

২০২৫ সাল মহাকাশ গবেষণার জন্য সত্যিই এক রোমাঞ্চকর বছর হতে যাচ্ছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে আমরা আরও কাছে চলে আসব মহাবিশ্বের রহস্য এবং আমাদের গ্রহের ভবিষ্যত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের পথে।