বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের এক প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে, আদালতের কর্মচারীরা ঘুষ গ্রহণের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিচারকরা। কমিশনের পরিচালিত অনলাইন জরিপে ৬৬ শতাংশ বিচারক জানিয়েছেন, তাদের সহায়ক কর্মীরা ঘুষ চান। একই সাথে নাগরিক ও আইনজীবীদেরও এমনই মত, যারা জরিপে অংশ নেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারাঙ্গনে দুর্নীতি ও অনিয়মের কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন উল্লেখ করেছে, আদালতের কর্মচারীরা ঘুষ গ্রহণে জড়িত হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া ঝামেলামুক্ত হতে পারছে না, যার ফলে বিচারপ্রার্থীদের এক ধরনের হয়রানি ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে বিচারক ছাড়াও আইনজীবী, পুলিশ, সহকারী কর্মচারীসহ আরও অনেক পেশাদার রয়েছে, যারা বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষত, তাদের সাথে ঘুষের বিনিময়ে যোগাযোগ করতে বাধ্য হন অনেক বিচারপ্রার্থী।
এছাড়া, আদালতের কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়ে ১১ হাজার ২২৫ জন নাগরিক এবং ২২৮ জন আইনজীবীর জরিপের ফলাফলে ৮৪ দশমিক ৯০ শতাংশ নাগরিক এবং ৯১ দশমিক ৭০ শতাংশ আইনজীবী বলছেন, আদালতের কর্মচারীরা ঘুষ চান। অন্যদিকে, বিচারকদের ৬৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আদালতের কর্মচারীদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেছেন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিচারাঙ্গনে দুর্নীতি প্রতিরোধে কিছু সুপারিশও করেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, সুপ্রিম কোর্টের দুর্নীতি প্রতিরোধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন এবং বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য পৃথক পৃথক কমিটি গঠন। পাশাপাশি, অবসর গ্রহণের ছয় মাস আগে এবং প্রতি তিন বছর পরপর বিচারকদের এবং তাদের পরিবারের সম্পদের বিবরণ সংগ্রহ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া, বিচারক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মঘণ্টা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি, মামলা নিষ্পত্তি দ্রুততার সাথে করা এবং বিচারকদের ওপর পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করার কথা সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদনটি ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়, এবং এটি ৩৫২ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন, যা বিচার বিভাগ সংস্কারের বিষয়ে নানা সুপারিশ ও প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করেছে।