আজ ঢাকায় শুরু হয়েছে দেশের ৬৪ জেলার ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) সম্মেলন, যেখানে দেশীয় প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের প্রধানদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে, সম্মেলনের পটভূমিতে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে—বাংলায় 'ডেপুটি কমিশনার' পদবীটি কেন 'জেলা প্রশাসক' হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, যদিও এটি দেশের কোনো আইন বা বিধিতে নেই।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের 'পদবির পরিভাষা' শীর্ষক প্রকাশনায় 'ডেপুটি কমিশনার'-এর বাংলা পরিভাষা হিসেবে 'জেলা প্রশাসক' উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এ পদবীটির আইনি ভিত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছে না।
২০১৮ সালে 'পদবির পরিভাষা' প্রকাশনায়, 'ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস' কে 'উপকর কমিশনার', 'ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমস' কে 'উপকর কমিশনার, কাস্টমস', 'ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ' কে 'উপপুলিশ কমিশনার' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু 'ডেপুটি কমিশনার' পদবীর বাংলা অনুবাদ 'জেলা প্রশাসক' কেন করা হলো, তা নিয়ে একাধিক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ২০২৪ সালের ২ মার্চ ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এ বিষয়ে কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দাবি ছিল, যারা বাংলা অনুবাদ করেছেন, তাদের কাছে এর ব্যাখ্যা খোঁজা যেতে পারে।
এছাড়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষের কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, পদবীটির পরিবর্তন 'উপরের নির্দেশে' হয়েছে, যদিও এটি সঠিক অনুবাদ নয় বলে তারা জানিয়েছেন।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিত 'ডেপুটি কমিশনার'-এর ঊর্ধ্বতন হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বিভাগীয় প্রশাসনের প্রধানের পদবী 'কমিশনার', যার বাংলা পরিভাষা 'কমিশনার'ই রাখা হয়েছে। অথচ 'কমিশনার'কে 'বিভাগীয় প্রশাসক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, 'এটি ঔপনিবেশিক আমলের একটি অবশিষ্টাংশ, যেখানে প্রশাসক শব্দের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হতো।' তিনি আরও জানান, 'বাংলাদেশের জনগণ এবং প্রশাসন এখনও এই প্রথা থেকে মুক্তি পায়নি।'
পদবী নিয়ে এমন বিভ্রান্তির মাঝেও দেশের প্রশাসনিক ইউনিটগুলোর প্রধান হিসেবে ডিসির দায়িত্বের বিষয়ে আইনগত প্রশ্ন রয়ে গেছে। সাবেক ডিসি এ কে এম আব্দুল আওয়াল মজুমদার জানিয়েছেন, 'ডেপুটি কমিশনার' পদবী হিসেবে 'জেলা প্রশাসক' ব্যবহার করার যুক্তি স্পষ্ট নয়।
এছাড়া, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা যেমন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগ—এসব ইউনিট বর্তমানে নির্বাচিত প্রতিনিধির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে না। এমনকি জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ কার্যত অলংকারিকভাবেই রয়েছে, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই।
অতএব, 'জেলা প্রশাসক' পদবীর আইনি ভিত্তি এবং প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য কার্যকরী উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।