ওপেন মেসেজ সম্পাদকীয়

বন্ধ হোক ফুটপাত নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা!

শেখ অনিন্দ্যমিন্টু

প্রকাশ : ২৭-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১০৭

ময়মনসিংহ ঐতিহ্যেবাহী একটি সম্ভাবনাময় নগরী। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের ধারক এই শহর আজ এক নৈরাজ্যিক যানজট ও ফুটপাত দখলের নগরে পরিণত হয়েছে। শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা অগণিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে থাকা অবৈধ দোকান, আর সরু রাস্তাগুলো শহরবাসীর জীবনকে নরকে পরিণত করেছে। সমস্যাটি নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই জনদুর্ভোগের কারণ হিসেবে ফুটপাত ও রাস্তা দখলের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও, কিছুদিন পরেই পুরনো চিত্র ফিরে আসে। ফলে, “চোর-পুলিশ খেলা” চলতেই থাকে।

প্রশ্ন হলো, কেন এই চিত্রের পরিবর্তন হয় না? অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহ নগরীর ফুটপাত ও রাস্তা দখলের পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেট অবৈধ দোকান ও ফুটপাত দখলদারদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই চাঁদার একটি বড় অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্যের পকেটে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ কার্যকর হয় না। যা লাউ তাই কদু।
ময়মনসিংহ নগরীকে যানজট ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চাই সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এবং যৌথ প্রয়াস। এজন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি-

সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগকে যৌথভাবে বৈঠক করে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। দায়িত্ব ভাগ করে একযোগে কাজ না করলে সাময়িক উচ্ছেদের পর পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।

নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক ফুটপাত ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। কারা ফুটপাতে ব্যবসা করছে, কারা নেপথ্যে সুবিধা নিচ্ছে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফুটপাত দখলকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে নির্ধারিত হকার মার্কেট তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করলে মানবিক সমস্যা ও অবৈধ দখল দুই-ই কমবে।

ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে বড় অংকের জরিমানা এবং নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। একই সাথে চাঁদা আদায়কারীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করে অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ এবং চলমান সংখ্যাকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে।

সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও জনমত গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে নাগরিক অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

নগরীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ফুটপাত ও রাস্তায় অবৈধ দখলের মনিটরিং চালু করা যেতে পারে। পাশাপাশি, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও উচ্ছেদ টিমকে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে।

জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে তদারকি করবে।

ময়মনসিংহের শহরবাসী দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শিশুরা ফুটপাতে হাঁটতে পারে না, বৃদ্ধরা রিকশার ধাক্কা খায়, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। এটি কোনো সভ্য নগরীর চিত্র হতে পারে না।

আজ প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং সুশৃঙ্খল আইন প্রয়োগ। সময় এসেছে নগরবাসীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটানোর। পরিকল্পিত শহর গড়ার জন্য ময়মনসিংহকে মুক্ত করতে হবে ফুটপাতের এই দখলযুদ্ধ থেকে।