বৃহস্পতির অন্যতম বড় চাঁদ ক্যালিস্টো, যা আগে বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই সাধারণ এবং শান্ত এক গ্রহ উপগ্রহ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন নতুন এক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে আলোচনায় এসেছে। ১৯৯০ সালে নাসার মহাকাশযান 'গ্যালিলিও' ক্যালিস্টো থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তা এখন নতুন করে গবেষণা করা হয়েছে, এবং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, এই চাঁদের বরফের পৃষ্ঠের নিচে একটি বিশাল লুকানো সমুদ্র থাকতে পারে।
গ্যালিলিও মিশনের সময় ক্যালিস্টোর কাছ থেকে একটি অদ্ভুত চৌম্বকীয় সংকেত শনাক্ত করা হয়, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের এই ধারণা জন্ম দেয় যে, ক্যালিস্টোর বরফের শেলের নিচে লবণাক্ত সমুদ্রের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে, ক্যালিস্টোর শক্তিশালী আয়নোস্ফিয়ার এবং চার্জযুক্ত গ্যাসের স্তরের কারণে সংকেতটি নিশ্চিতভাবে সমুদ্রের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা যায়নি।
এবার, ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'কোচরান' এবং এর গবেষকরা গ্যালিলিও মিশনের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আরও উন্নত পরিসংখ্যান টুল ও কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে নতুন গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তারা ক্যালিস্টোর আয়নোস্ফিয়ারের গঠন ও ভূগর্ভস্থ সমুদ্রের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, ক্যালিস্টোর বরফের শেলের নিচে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ সমুদ্র বিদ্যমান থাকতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, এই সমুদ্রটি অন্তত ১০ কিলোমিটার গভীর হতে পারে, এবং এটি ক্যালিস্টোর বরফের শেলের নিচে লুকানো রয়েছে, যার পুরুত্ব কয়েক ডজন থেকে কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে, ক্যালিস্টোর ভূগর্ভস্থ সমুদ্রের সত্যতা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এই গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যদি ক্যালিস্টোতে এমন একটি সমুদ্র থাকে, তবে অন্যান্য মহাসাগরীয় জগতের মতো এখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে।
নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার ভবিষ্যত মিশনগুলির মাধ্যমে ক্যালিস্টোর এই রহস্যময় সমুদ্রের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আসন্ন 'ইউরোপা ক্লিপার' এবং 'জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার' মিশনগুলো ক্যালিস্টো এবং অন্যান্য বৃহস্পতির চাঁদের ওপর আরও বিস্তারিত গবেষণা চালাবে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, আগামী মহাকাশ অভিযানগুলোর মাধ্যমে ক্যালিস্টোর এই সমুদ্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা কোয়ার্কি মহাসমুদ্রের মতো বিজ্ঞানকে নতুন দিগন্ত দেখাবে।
তথ্য সূত্র: ফিজিক্সওআরজি