সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

গৌরীপুরে চক্ষু হাসপাতালের স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ২-২-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৫৫

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: চক্ষু চিকিৎসার নানা উদ্ভাবন এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত প্রায় জিনিসপত্র সংরক্ষণ করতে গৌরীপুরে প্রতিষ্ঠিত ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে ‘স্মৃতি জাদুঘর’ উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত চক্ষু হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে এই জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম এ মুকতাদির। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তার সহধর্মিণী অধ্যাপিকা ডা. মাহমুদা খাতুন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনী বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাজ্জাদুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল আহমেদ নাসের, এবং গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির্জা মাজহারুল আনোয়ার।

এ সময় ডা. মুকতাদির জানান, তিনি এবং তার সহধর্মিণী ডা. মাহমুদা খাতুন ২০০৪ সালে নিজগ্রাম নয়াপাড়ায় চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে প্রতিবছর গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স সংযোজন সেবা দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সাল থেকে গ্রামাঞ্চলে স্কুল ভবনে চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে চক্ষু সেবা দিয়ে আসছেন তিনি। এই দীর্ঘ ৪৭ বছরে এক লাখ ২০ হাজার গরিব রোগীর চক্ষু চিকিৎসা সম্পন্ন করেছেন তিনি।

স্মৃতি জাদুঘরে ডা. মুকতাদিরের উদ্ভাবিত ১৩টি চক্ষু চিকিৎসা যন্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে, যা তিনি ১৯৭৯-১৯৮০ সালে তৈরি করেন। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে অপথালমোস্কোপ, রেটিনোস্কোপ, ডিসিআর বোন ট্রিফাইন, ক্রায়ো এক্সট্রাক্টর প্রভৃতি, যা দেশের চক্ষু চিকিৎসকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি আরও জানান, ১৯৮৩ সালে তিনি জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির কাছে ক্রায়ো এক্সট্রাক্টর যন্ত্রটি বিক্রি করেছিলেন, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চক্ষু চিকিৎসকদের জন্য উপকারী হয়েছে।

এছাড়াও স্মৃতি জাদুঘরে রয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত প্রায় জিনিসপত্র, যেমন: হুঁকা, পানদানী, বিভিন্ন সময়ের চশমা, মোমদানী, কুপিবাতি, গ্রামোফোন, রেডিও, সাদা-কালো টিভি, টাইপ রাইটার, ভিসিআর, সিডি প্লেয়ার, ডিভিডি প্লেয়ার, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, স্বাধীনতা পদক এবং তার ব্যবহৃত নানা পুরস্কারসহ অসংখ্য স্মৃতি সংগ্রহ।

ডা. মুকতাদিরের দীর্ঘ কর্মজীবন ও চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০২০ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন এবং ১৯টি সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০১৬ সালে ভারতীয় 'লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' এবং ২০১5 সালে গোল্ডমেডেল।

উদ্বোধন শেষে অতিথিরা ফিতা কেটে স্মৃতি জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং কেক কেটে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।