ঢাকা ০২:১৫:৫৯ পিএম | ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় কঙ্কাল চোর গ্রেফতার

  • আপলোড তারিখঃ 22-12-24 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1000013 জন

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় কঙ্কাল চোর গ্রেফতার

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মানবদেহের কঙ্কালসহ চোর চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মুক্তাগাছা শহরের পৌরসভার গেইট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ময়মনসিংহ জেলার কুখুরাকান্দা এলাকার মৃত আক্কেল আলীর ছেলে রুবেল মিয়া (২৪) এবং জামালপুর জেলার রুহিলী চরপাড়া এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (২৫)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের সদস্যরা উপজেলার চেচুয়া এলাকার বিভিন্ন কবরস্থান থেকে লাশ তুলে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঙ্কাল সংগ্রহ করতেন। প্রথমে কবর থেকে মরদেহ তুলে গভীর অরণ্য বা পাহাড়ি জনপদে নিয়ে যেতেন। পরে কেমিক্যালের মাধ্যমে লাশ পঁচিয়ে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মানবদেহের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল সংগ্রহ করতেন। এই কঙ্কালগুলো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চড়া মূল্যে নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হতো। এমনকি এসব কঙ্কাল পাশের দেশ নেপাল ও ভারতের মেডিকেল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের কাছেও পাচার করা হতো।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুক্তাগাছা পৌরসভার গেইটে গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে তল্লাশি করে পলিথিনে মোড়ানো দুটি মাথার খুলি এবং মানবদেহের বিভিন্ন হাড়গোড় জব্দ করা হয়।

মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, এরা পেশাদার কঙ্কাল চোর চক্রের সদস্য। গত ২১ ও ২৫ নভেম্বর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের কোণাগাঁও কেজাইকান্দা গোরস্থান থেকে কবর খুঁড়ে ১০টি কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালেও কঙ্কালসহ এদের গ্রেপ্তার করেছিল রেলওয়ে পুলিশ, সে ঘটনায় মামলাও হয়েছিল। এদের চক্র জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে।

ওসি আরও জানান, এই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

কঙ্কাল চুরির এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং নিষ্ঠুর। প্রথমে কবর থেকে মরদেহ তুলে গভীর অরণ্য বা পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কেমিক্যাল ব্যবহার করে লাশ পঁচানো হয় এবং গরম পানি দিয়ে ধুয়ে কঙ্কাল সংগ্রহ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত অমানবিক এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

এই চক্রটি শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সক্রিয়। সংগৃহীত কঙ্কালগুলো নেপাল ও ভারতের মেডিকেল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের কাছে পাচার করা হয়। এটি একটি সুসংগঠিত চক্র, যা দীর্ঘদিন ধরে এই অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

পুলিশের এই সফল অভিযানের ফলে একটি সুসংগঠিত কঙ্কাল চোর চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। এতে করে এই ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে নিয়োজিত অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই ধরনের অপরাধ দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়।

সাধারণ জনগণকে এই ধরনের অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যক্রম দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। এতে করে সমাজ থেকে এই ধরনের অপরাধ দূর করা সম্ভব হবে।