সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ময়মনসিংহে পাবলিক টয়লেট সংকট: ভোগান্তিতে নগরবাসী

অনিন্দ্যবাংলা:

প্রকাশ : ২৭-২-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫২১৩

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) গঠনের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে, নগরবাসীর অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাবলিক টয়লেটের অভাব। বিশেষ করে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকায় তারা প্রতিদিন নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তথ্যসূত্রে জানা যায়; ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ নাগরিকের বসবাসের কেন্দ্রস্থল। প্রতিনিয়তই এই নগরে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে নাগরিক সেবার পরিধিও সম্প্রসারিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এ সমস্যার কারণে সাধারণ নাগরিকদের, বিশেষ করে নারী, বয়স্ক ও শিশুদের চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। পাবলিক টয়লেটের অভাবে অনেক নারী দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যও এটি বড় ধরনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নগরীতে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাচালক এবং পথচারীরা প্রায়শই পাবলিক টয়লেটের অভাবে বিপাকে পড়েন। পুরুষদের ক্ষেত্রে কিছুটা বিকল্প থাকলেও, নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত বিব্রতকর ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক নারী দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখেন, যা তাদের কিডনি ও মূত্রনালীর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এটি এক বিশাল সমস্যা।

যত্রতত্র প্রস্রাব-পায়খানার ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নানা ধরনের রোগের সংক্রমণও ঘটে। এ থেকে নানা পানিবাহিত রোগ ছড়াতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তারা দূষিত পরিবেশের সংস্পর্শে সহজেই আসে।

শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার, জানান “শপিং করতে বের হলে বা দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকলে বিশাল সমস্যায় পড়তে হয়। পাবলিক টয়লেটের অভাবে অনেক সময় ক্যাম্পাসে ফেরার আগেই শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে।”

রিকশাচালক মো. আব্দুল খালেক জানান; “সারা দিন রাস্তায় থাকি, কিন্তু টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে ফুটপাথের পাশে যেতে হয়, যা একদিকে অস্বাস্থ্যকর, অন্যদিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।”

খাবার বিক্রেতা মোহাম্মদ আরিফ বলেন "আমরা যারা সারা দিন রাস্তায় থাকি, তাদের জন্য পাবলিক টয়লেটের অভাব একটা বড় সমস্যা। অনেক সময় বাধ্য হয়ে দোকানের পেছনে বা রাস্তার ধারে যেতে হয়, যা অস্বাস্থ্যকর এবং লজ্জার বিষয়।"

নারী কর্মজীবী সালমা আক্তার জানান, "শহরের অনেক জায়গায় নারীদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেট নেই। যে কয়টা আছে, সেগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। এতে আমাদের বাইরে বের হলে বিশাল সমস্যা হয়।"

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. রাশেদুল হাসান বলেন,  "যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগের কারণে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগের কারণ হতে পারে এটি। স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করা জরুরি।"

যেহেতু ময়মনসিংহ একটি ক্রমবর্ধমান নগরী, তাই নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ব্যবস্থা চালু করা অত্যন্ত জরুরি। ভ্রাম্যমাণ টয়লেট শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে সহজেই স্থাপন করা সম্ভব এবং এগুলো নির্দিষ্ট সময় পর পর স্থানান্তর করে প্রয়োজনে নতুন এলাকায় সরবরাহ করা যেতে পারে।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যদি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়, তবে নাগরিক দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হবে। উন্নত নগর ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এটি একটি জরুরি পদক্ষেপ বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

তাই নগর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে নাগরিকদের দাবি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে নাগরিকদের জন্য একটি স্বাস্থ্যসম্মত, পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ নগরী গড়ে তোলা হোক।

মসিকের তথ্য অনুযায়ী, শহরের জায়গার অভাব ও তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে নগরীর কয়েকটি স্থানে কিছু পাবলিক টয়লেট থাকলেও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নাগরিকদের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, অপর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের কারণে নারীরা দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকতে সংকোচ বোধ করেন, যা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, পাবলিক টয়লেট সংকট নিরসনে নতুন প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন।

ময়মনসিংহ নগরীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে পাবলিক টয়লেটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে নাগরিক ভোগান্তি আরও বাড়বে। তাই নগর কর্তৃপক্ষের উচিৎ দ্রুত ভ্রাম্যমাণ পাবলিক টয়লেট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।