সকল খবর দেশের খবর

নির্বাচনে বড় ধরনের সংস্কার প্রস্তাব, একক প্রার্থীকে ‘না ভোট’-এর মুখোমুখি হতে হবে: ইসি

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ৩-৯-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৯৯

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমূল সংস্কার আনতে চায়। এ লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের একটি খসড়া প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবে নির্বাচন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তিনি।

সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, কোনো ব্যক্তি আদালতের ঘোষণায় যদি ফেরারি আসামি হিসেবে চিহ্নিত হন, তবে তিনি আর কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একই সঙ্গে কোনো প্রার্থী যদি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেন বা তথ্য গোপন করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি এই অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হবে এবং আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তনটি হলো ‘না ভোট’ বিধান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যদি কোনো নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী থাকেন, তাহলে তাকেও ভোটের মাধ্যমে বৈধতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে, যদি তার চেয়ে ‘না ভোট’ বেশি পড়ে, তবে নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিল ঘোষণা করবে। তবে দ্বিতীয়বারও একই পরিস্থিতি হলে আর পুনর্নির্বাচন হবে না।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব পাবেন। তিনি চাইলে ভোটগ্রহণ স্থগিত বা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, যা আগে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে করা যেত।

সংশোধনীতে ইভিএম পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। পরিবর্তে পোস্টাল ব্যালটের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রবাসী ভোটার, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।

সাংবাদিকদের জন্য নতুন বিধানে বলা হয়েছে, ভোটগণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে পারবেন, তবে শর্ত সাপেক্ষে। তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে হবে। তবে প্রার্থীরা, এজেন্টরা কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

নতুন আইনে নির্বাচনী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রতিটি ভোটারের জন্য ১০ টাকা হারে ব্যয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে, যেটি বেশি হবে সেটিই কার্যকর হবে। এছাড়া জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে নির্বাচনী পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নতুন বিধানে জোটগত নির্বাচন হলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এছাড়া নির্বাচনী এজেন্ট হতে হলে তাকে অবশ্যই ওই আসনের ভোটার হতে হবে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো, কোনো প্রার্থী যদি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য বা চেয়ারম্যান হন, তাহলে নির্বাচনের আগেই তাকে সে পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। স্বার্থের সংঘাত এড়াতেই এই বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “এসব সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে আমরা আশাবাদী।” তিনি আরও বলেন, “আইন মন্ত্রণালয় যদি দ্রুত এই সংশোধনীগুলো অনুমোদন করে, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ভোটারদের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে।