সকল খবর দেশের খবর

অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কেনার জুলুমে প্রবাসীসহ সাধারণ যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ৫-২-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৬৭

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : অতিমুনাফালোভী কিছু ট্রাভেল এজেন্ট ও সিন্ডিকেটের কারণে উড়োজাহাজের টিকিট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে, যার ফলে বিদেশগামী যাত্রীরা নিয়মিত টিকিটের চেয়ে তিন গুণ বেশি মূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়ে এক লাখ টাকারও উপরে চলে গেছে।

জানা গেছে, কিছু ট্রাভেল এজেন্টের সিন্ডিকেট বাংলাদেশ থেকে রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, দোহা, মালয়েশিয়া ও কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন রুটের টিকিট ব্লক করে রেখেছে, যার কারণে প্রবাসী শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা অসহনীয় দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৬০-৭০ হাজার টাকার টিকিটের দাম ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় পৌঁছাচ্ছে।

এতে করে শুধু সাধারণ যাত্রীরা নয়, দেশীয় ট্রাভেল এজেন্টরা ও সমস্যায় পড়েছেন। তারা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, কারণ তাদের প্যাকেজও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিক্রি হচ্ছে না। ইউরোপা ট্রাভেলসের পরিচালক মো. আনোয়ার হোসাইন কালের কণ্ঠকে জানান, “টিকিটের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কাজেও ভাটা পড়েছে। যাত্রীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।”

আসলে কিছু ট্রাভেল এজেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট অগ্রিম ব্লক করে, কিন্তু এতে যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এভাবে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বৃদ্ধি করে। ট্রাভেল এজেন্টরা বলেন, “এই সিন্ডিকেটের কারণে যাত্রীদের পক্ষে টিকিট খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না এবং তখন তারা বাধ্য হয়ে অত্যধিক মূল্য পরিশোধ করেন।”

এদিকে, এই সমস্যার সমাধানে বিমান মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। আটাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ভূইয়া জানান, "এ পরিস্থিতি বন্ধ করতে হলে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি সরকার সিট ব্লক বন্ধ করে দেয়, তবে সিন্ডিকেট কাজ করতে পারবে না এবং টিকিটের দামও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।"

অন্যদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাফিকুর রহমান জানিয়েছেন, তারা আগাম সিট বুকিং ও কৃত্রিম মজুদ নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। তিনি বলেন, "এই ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং যারা অভিযুক্ত তাদের বিভাগ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।"

প্রবাসী কর্মীদের জন্য এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি অনেক সময় জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এক প্রবাসী ইমরান হোসাইন বলেন, “গত বছর ৭০ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছিলাম, কিন্তু এবারের টিকিটের দাম ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।”

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সিন্ডিকেট ব্যবস্থা যদি বন্ধ না হয়, তবে প্রবাসী শ্রমিকসহ সাধারণ যাত্রীদের জন্য এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।