শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, নিয়োগে অনিয়ম এবং জাল সনদ চিহ্নিত করার কাজ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। দীর্ঘদিন ধরে ‘মিনিস্ট্রি অডিট’ নামে পরিচিত এই পরিদর্শন কার্যক্রমে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে মোটা খামের বিনিময়ে পরিদর্শকরা অনিয়মগুলো ধরতে না পারার খবর সামনে এসেছে। এসব অনিয়ম বন্ধ করতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে ডিআইএ।
নতুন উদ্যোগ হিসেবে, পরিদর্শকরা এবার জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-এর তত্ত্বাবধানে পরিদর্শন করবেন। শুধু তাই নয়, ডিআইএ নিজস্ব মনিটরিং টিমও মাঠে কাজ করবে, যা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহায়তায় পরিদর্শকদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখবে।
ডিআইএ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য ডিআইএ নতুন টিম গঠন করেছে। এই টিমের সদস্যরা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং ডিজিএফআইয়ের সহযোগিতায় পরিদর্শন করতে যাবেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অনিয়ম এবং শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরীক্ষা করা।
এ বিষয়ে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা পরিদর্শনে গিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে চাই। এজন্য পরিদর্শন প্রক্রিয়া কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে।’’
এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, কিছু কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এতে ঘুষের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, কারণ আরও বেশি মানুষের ম্যানেজ করতে হবে।
ডিআইএ পরিদর্শন দুই ভাগে হয়ে থাকে—অডিট এবং পরিদর্শন। প্রথম ভাগে আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, নিয়োগে অনিয়ম এবং জাল সনদ শনাক্ত করা হয়, আর দ্বিতীয় ভাগে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পরিদর্শন করা হয়। ডিআইএ কর্মকর্তারা এখন পরিদর্শনকে বেশি গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানের দিকে বেশি নজর দেওয়া যায়।
এদিকে, ডিআইএ-র এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু কর্মকর্তারা মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, পরিদর্শনের বিষয়ে অধিক মনোযোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না, কারণ অ্যাকাডেমিক সুপারভিশন করার জন্য ডিআইএ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বর্তমানে, বেশ কিছু পরিদর্শন টিম মাঠে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। তবে, গত তিন মাসে প্রায় সব পরিদর্শন কার্যক্রম স্থগিত ছিল, যার ফলে দুর্নীতি ও নিয়োগে অনিয়ম শনাক্তের কাজটি থমকে গেছে।
মোট ১২০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করেছে ডিআইএ ২০১৯-২০২১ অর্থবছরে, যা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এখন ডিআইএ কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক দুর্নীতি এবং অনিয়মগুলো রোধ করা সম্ভব হবে।