সকল খবর ভূমি বিষয়ক খবর

প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতায় ভূমিসেবায় জটিলতা: চরম দুর্ভোগে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ১৪-১-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭৯

অনিন্দ্যবাংলা, ময়মনসিংহ: ভূমি মন্ত্রণালয়ের সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ভূমিসেবা একত্রিত করার পরিকল্পনা, যা গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাবে বলে দাবি করা হয়েছিল, তা বাস্তবে সমস্যার পাহাড় তৈরি করেছে। দেড় মাস ধরে বন্ধ থাকা ভূমিসেবা কার্যক্রম এবং নতুন সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে নামজারি ও খাজনা প্রদান করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ভূমি মালিকরা। এর পাশাপাশি, লগইন আইডি না পাওয়ার কারণে ভূমি এবং ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীরা চরম সমস্যায় পড়েছেন। প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতার কারণে সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন ব্যর্থ হওয়ায়, রাজস্ব আদায়ের কাজেও বিশাল ধস নেমেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে ২৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-মিউটেশন, ই-পরচা এবং ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেম বন্ধ থাকবে এবং ১ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় সেবা চালু হবে। তবে প্রায় দেড় মাস পরও সেবা পুরোপুরি সচল হয়নি। নতুন সফটওয়্যারের ধীরগতি এবং গ্রাহকসেবা সুবিধার অভাবের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নামজারি এবং খাজনা দিতে পারছেন না ভূমি মালিকরা।

ভূমি সেবা গ্রহণে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। নতুন সফটওয়্যারে নামজারি প্রক্রিয়ার সময় 'এসি ল্যান্ড' অপশনে ক্লিক করলে আগের কর্মকর্তার আইডি প্রদর্শিত হচ্ছে, যা বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই করতে সমস্যা সৃষ্টি করছে। নামজারির নতুন আবেদনও প্রক্রিয়া অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইডিতে ঢুকছে না। সার্ভার জটিলতার কারণে ভোটার আইডি, জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্টের মাধ্যমে নামজারি করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে, ভূমি ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারছেন না।

অন্যদিকে, পূর্বের সফটওয়্যারের আইডি পাসওয়ার্ড এখন আর কার্যকরী নয়, ফলে বহু গ্রাহকের তথ্য মুছে গিয়ে তাদের পুনরায় নামজারি করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ভূমি অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। কিছু অফিসে সার্ভার জটিলতার কারণে খাজনা সংগ্রহও হচ্ছে না, যা সরকারি রাজস্বের জন্য ক্ষতিকর।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন সফটওয়্যার চালু হওয়ার আগে কোনো পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়নি এবং ভূমি কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। এর ফলে, সফটওয়্যারের কার্যকারিতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ময়মনসিংহের কিছু ভূমি অফিস কর্মকর্তা জানাচ্ছেন যে, এই সফটওয়্যার চালুর কারণে সরকারি খাসজমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক মো. ইফতেখার হোসেন জানিয়েছেন, সার্ভারের ধীরগতি ও জটিলতার কারণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে, তিনি দাবি করেছেন যে বিষয়টি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, এবং তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ৩৪৬৮টি অফিসে সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ভূমি মন্ত্রণালয় এই সফটওয়্যার সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে, জনগণের ভোগান্তি ও সরকারি রাজস্ব ক্ষতির এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।