চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চিটাগং ক্লাব লিমিটেডের গেস্ট হাউজ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে সেখানে অবস্থান করছিলেন তিনি। শনিবার সকালে তার রুম থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে গ্লাসের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিছানায় নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল করিম জানান, “তিনি রাতে ক্লাবের গেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) একটি মেডিকেল টিম এসে তাকে মৃত ঘোষণা করে। প্রাথমিকভাবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই ধারণা করা হচ্ছে।”
জানা গেছে, এম হারুন-অর-রশীদ গত ৩ আগস্ট বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ক্লাবের গেস্ট হাউজের তৃতীয় তলার ৩০৮ নম্বর রুমে ওঠেন। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি মামা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে নন্দনকাননের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে আবার ক্লাবে ফিরে আসেন।
পরদিন সকালে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকার কথা ছিল। বারবার ফোন করেও সাড়া না পাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা রুমে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। পরে কোনো সাড়া না পেয়ে বারান্দার কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা উপস্থিত রয়েছে। পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।
১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্ম নেওয়া এম হারুন-অর-রশীদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালের জুনে অবসরে যান। অবসরের পর তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি আলোচিত ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে ডেসটিনির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে হারুন-অর-রশীদও আইনি জটিলতায় পড়েন এবং ২০১২ সালে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
তার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।