বুলডোজারের দৃশ্য দেইখ্যা ব্যথিত হইলাম। সাহিত্য সংসদ ভাঙ্গছে...! সাহিত্য সংসদ তো কোনো দখলবাজ না! ফেসবুকের পোস্টে লেখা ছিল “সাহিত্য সংসদের মঞ্চ ভেঙে ফেলছে!” এইটুকু পড়েই বুকের মাঝে একখান ধাক্কা খাইলাম। মনে হইল কেউ আমার শৈশবের খেলার মাঠে বুলডোজার চালায় দিতেছে!
এই মঞ্চটা কি শুধু ইট-পাথরের খাঁচা? না রে ভাই! এইটা হইল ময়মনসিংহের মাটির গন্ধ, আমাদের কবিতার ঘ্রাণ, নাটকের ঠাস! এইখানে দাঁড়াইয়া হাফ প্যান্ট পরা ছেলেটাও একদিন গর্জে উঠছিল; “জনতার সংগ্রাম চলবেই!” এখন সেই ছেলেটা দেশের নামকরা কবি। তারই স্মৃতি ধুলায় গড়াগড়ি খাইতেছে।
তয় হঠাৎ কী হইল যে এই মঞ্চটারে ‘অবৈধ’ ঘোষণা কইরা শহর সুন্দর করার নামে 'কান্না সুন্দর' বানানো হইল? শহরের সৌন্দর্য বুঝি মঞ্চ ফেলে দিলে বাড়ে? গাছ কাটলে উন্নয়ন হয়? কবি তাড়াইলে কি গান বাজে? কে করলো এই কাজ? সিটি কর্পোরেশন নাকি জেলা প্রশাসন?
এইটা কোনো সাধারণ ভাঙচুর না মহাশয়েরা, এইটা হইল; সাংস্কৃতিক খুন! শিল্প সংস্কৃতির ময়মনসিংহকে খুন করা হলো আজ! এটা ভুল না, এটা অপরাধ! এই মঞ্চে আমরা কতো বিকেল কাটাইছি, কতো আন্দোলনের কবিতা লিখছি, প্রেমের কবিতা লিখছি, মঞ্চে দাঁড়াইয়া নাটকের রিহার্সাল করছি, “তোমার চেয়ে দামি আজো কিছু নাই”; জাগো বাংলাদেশ, জাগো বিবেক…!
তিন দশক আগে শত শত শিল্প সংস্কৃতির কারিগরেরা এই মঞ্চ বানাইছিল। নিজের হাতে দাঁড় করাইছিল এই সাংস্কৃতিক আশ্রম। আর আজ, কাগজে কলমে উন্নয়নের ঘোড়া দৌড়ায়, আর মঞ্চ ভেঙে পড়ে!
প্রশাসনের লোকজন তো বলে, “অবৈধ দখল!” বাহ্! এতদিন ধইরা অবৈধ ছিল আর বুঝলা না? তখন কি চক্ষু বন্ধ আছিল? আর মঞ্চে তো নেতামন্ত্রীরাও অনুষ্ঠান কইরা গেছেন, তাদেরও কি তখন অবৈধ মনে হয় নাই?
তামাম ব্রহ্মপুত্র লুটপাট- দখল, প্রশাসন কথা হয় না! সরকারী বাড়ি দখল প্রশাসন কথা হয় না! রাস্তা দখল কথা হয় না! আর্চ স্টিল ব্রীজের দুর্নীতি প্রশাসন কথা কয় না! সাহিত্য সংসদের এতটুকু জায়গা নিয়ে প্রশাসনের এত আক্রোশ কেন?
তাই আমি লেদু চাচা কইতেছি-
এই মঞ্চ ভাঙার জন্য যে হাত চালাইছে, সেই হাত যেন লজ্জায় কাপুকাপু করে। এই বর্বর সিদ্ধান্ত যারা নিছে
নিছে, তারা যেন বুঝে-এইটা শহরের হৃদয়টা টেনে ছিঁড়ে ফেলসে তাঁরা । এটা ময়মনসিংহ শিল্প সাহিত্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় কালো অধ্যায়!
আমার দাবি-
১. এই জঘন্য কাজের দ্রুত তদন্ত হউক।
২. যারা ‘উন্নয়ন’ নাম দিয়া ভুল কাজ করছে, তারা জবাবদিহি করুক।
৩. পূর্বের নকশায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় মঞ্চ গড়া হউক।
৪. আর সামনের দেয়ালে একটা লালচে ফলক লাগাও; “সংস্কৃতি কখনো মুছে যায় না!”
সবশেষে কই,
এই শহর শুধুই কাঁচা-পাকা রোড না, এই শহর একখান সাহিত্যিক আত্মা। তারে যদি আবারও কেউ গুঁড়াইতে আসে, তাহলে লেদু চাচা চুপ থাকবো না; নিজের হাতের কবিতা ছুঁড়ে দিয়ে সংস্কারের হাতুড়ি নিয়ে নামবে রাস্তায়!
আমাদের সাহিত্য সংসদ ফিরিয়ে দাও আগ্রাসন!
তোমাদের
লেদু চাচা
সাহিত্য সংসদের মঞ্চের একনিষ্ঠ কর্মী