সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

সংযোগ সড়ক নিয়ে ‘নকশা কেলেঙ্কারি’, হাইকোর্টের রুল

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২৪-৬-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১৭১

ময়মনসিংহবাসীর বহু প্রতীক্ষিত কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প আবারও আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে। প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাণকাজ চলমান থাকলেও সংযোগ সড়কের নকশা অনুমোদনবহির্ভূতভাবে পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ব্যয়ের দায় চাপানো হচ্ছে জাতীয় বাজেটের ওপর। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট গত ৪ জুন ২০২৫ তারিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুল জারি করেছে, যা প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

হাইকোর্টের রুল ও এর প্রেক্ষাপট : গত ৪ জুন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কেওয়াটখালী ব্রিজ প্রকল্পে অনুমোদিত নকশা অতিক্রম করে অতিরিক্ত কাজ করা হয়েছে; এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রুল জারি করে।

রুলে বলা হয়, কেন শুধুমাত্র ২৩ জুন ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ECNEC (একনেক) সভায় অনুমোদিত প্রকল্প পরিকল্পনার ভিত্তিতেই কাজ পরিচালনা করা হবে না এবং কেন অনুমোদনবহির্ভূত কাজ অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না; তা বিবাদীদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদন ও রাষ্ট্রপক্ষ- নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কালাম আল আজাদ-এর করা রিট পিটিশনে অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম শুনানি করেন। বিবাদী হিসেবে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কেওয়াটখালী ব্রিজ প্রকল্প পরিচালক ও ব্যবস্থাপক এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে যুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন, ডিএজি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কামরুল ইসলাম, রাফিজা আলম লাকি ও মারিয়া তানজিমাথ।

সংযোগ সড়কের নাম করে নতুন নকশায় বিশাল ব্যয়বৃদ্ধি: হাইকোর্টে উপস্থাপিত রিটের কপি অনুযায়ী, প্রকল্পে ৩২০ মিটার সংযোগ সড়ক অনুমোদিত থাকলেও বাস্তবে এই সড়কের নকশা পরিবর্তন করে এতে দীর্ঘ র‍্যাম্প, নতুন ওভারপাস ও একাধিক ব্রিজীয় কাঠামো যুক্ত করা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জমি অধিগ্রহণের নামে জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে ভূমি মালিকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনুমোদনহীন এই কর্মকাণ্ডকে রিটে ‘নকশা জালিয়াতি’ বলে অভিহিত করা হয়।

অর্থ অপচয়ের আশঙ্কা: “একনেক” অনুমোদন লঙ্ঘনের ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একনেক সভায় অনুমোদিত নকশা ও খরচের বাইরে গিয়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন মানেই হচ্ছে রাষ্ট্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার বিপর্যয়। এই প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা শেষ পর্যন্ত জনগণের ওপরেই বর্তাবে।

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “একনেকের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে গোপনে নকশা পরিবর্তন করে সংযোগ সড়কে অতিরিক্ত ব্যয়পথ তৈরি করা হয়েছে। এটা শুধু অবৈধ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অর্থ ও আস্থার ভয়ানক অপব্যবহার।”

ময়মনসিংহবাসীর উদ্বেগ: ‘ব্রীজ চাই, কিন্তু প্রকল্প দুর্নীতিমুক্ত হোক’
ব্রহ্মপুত্রের ওপারে ঢাকাগামী যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনের জন্য কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল ব্রিজ একটি যুগান্তকারী অবকাঠামো হতে পারত। কিন্তু সম্প্রসারিত সংযোগ সড়কের নামে একদিকে যেমন দীর্ঘসূত্রতা, অন্যদিকে ব্যয়বৃদ্ধি ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকল্পটিকে বিতর্কিত করে তুলেছে। স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন; মূল ব্রীজের নির্মাণ চলুক, কিন্তু অনুমোদনবিহীন সংযোগ সড়কের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

একজন প্রবীণ নাগরিক বলেন, “আমরা ব্রীজ চাই, কিন্তু কোনো দুর্নীতি বা নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে নয়। প্রকল্প হোক স্বচ্ছ, জনগণের অর্থ যেন অপচয় না হয়।”

হাইকোর্টের রুল: একটি নজির স্থাপন এই রুল শুধু কেওয়াটখালী ব্রিজ নয়, দেশের অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও একটি শক্ত বার্তা দিচ্ছে; যেখানে অনুমোদিত নকশা, ব্যয় ও নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে আদালতের জিজ্ঞাসার জবাব দিতে হবে।

উন্নয়ন হোক জবাবদিহিতার আলোকে : কেওয়াটখালী ব্রিজ প্রকল্প শুধু একটি অবকাঠামো নয়; এটি ভবিষ্যতের ময়মনসিংহের যোগাযোগ, অর্থনীতি এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এই প্রতীক যেন কোনো অসৎ চক্রান্ত বা অর্থলোলুপ কর্মকাণ্ডে কলঙ্কিত না হয়, এটাই আজ ময়মনসিংহবাসীর দাবি।

মূল সেতুর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকুক, তবে অনুমোদনবহির্ভূত সংযোগ সড়কের কাজ অবিলম্বে বন্ধ হোক; এবার এই দাবিতে মুখর হোক জনমত