বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত প্রাচীন জনপদ সন্দ্বীপ দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলার শিকার। প্রায় তিন হাজার বছরের মানব বসতির ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও দ্বীপটির জনজীবন ছিল যাতায়াতের সীমাবদ্ধতা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে দুর্বিষহ। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সরকারের উদ্যোগ সন্দ্বীপের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।
সীতাকুণ্ড-গুপ্তছড়া রুটে বহুল প্রত্যাশিত ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হয়েছে। এর ফলে দ্বীপটির সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও সুদৃঢ় হয়েছে। আগের মতো আর কোমরপানি পেরিয়ে, কাদা মাড়িয়ে চট্টগ্রামে যেতে হচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষা ও পণ্য পরিবহনে এ ফেরি সার্ভিস সন্দ্বীপবাসীর জন্য নতুন আশার আলো হয়ে এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের তত্ত্বাবধানে মাত্র সাত মাসের কম সময়েই এ ফেরি চলাচল বাস্তবায়ন হয়। উদ্বোধনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সন্দ্বীপকে ‘রিসোর্ট দ্বীপ’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে, গত ৩৬ বছরে সন্দ্বীপের আয়তন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নতুন করে জেগে ওঠা ৩৯৮ বর্গকিলোমিটার স্থায়ী ভূমি ও ৭৭ বর্গকিলোমিটার পলল ভূমিসহ বর্তমানে সন্দ্বীপের প্রকৃত আয়তন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার। তবে এসব ভূমি এখনো কাগজপত্রে যুক্ত হয়নি সন্দ্বীপের সাথে। অভিযোগ রয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে একটি প্রভাবশালী মহল এসব নতুন চরকে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। তবে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দ্রুত সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সময় সন্দ্বীপের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর। পর্যটন, মৎস্য শিল্প, কৃষি এবং শিক্ষা খাত—সব ক্ষেত্রেই সন্দ্বীপ হয়ে উঠতে পারে এক নতুন অর্থনৈতিক হাব। ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় দ্বীপে পণ্য পরিবহন সহজ হয়েছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যে বাজারদরে পড়তে শুরু করেছে।
দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়নে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। সন্দ্বীপের উন্নয়নের মডেল অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য দ্বীপাঞ্চলেও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা সম্ভব।