অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল: রাষ্ট্রের কল্যাণ নাকি ক্ষতি?
- আপলোড তারিখঃ 25-12-24 ইং |
- নিউজটি দেখেছেনঃ 1000011 জন
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল: রাষ্ট্রের কল্যাণ নাকি ক্ষতি?
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল: রাষ্ট্রের কল্যাণ নাকি ক্ষতি?
বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ৪০টি অপ্রয়োজনীয় ও অলাভজনক প্রকল্প বাতিল এবং ১৫টি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় গৃহীত অনেক প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগকে যেমন সাহসী বলা যায়, তেমনি এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো গভীরভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের প্রভাব
যে প্রকল্পগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই রাজনৈতিক স্বার্থে নেওয়া হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় মেট্রোরেল লাইন-৫, এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ছাদ খোলা ট্যুরিস্ট বাস সংগ্রহ প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটির ক্ষেত্রে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিদ্যমান ছিল। যেমন, হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারত। এ ধরনের প্রকল্প বাতিলের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সঠিক বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, পরিবেশ ও অর্থনীতি বিবেচনা করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা
অপর দিকে, কিছু প্রকল্প বাতিল বা স্থগিত রাখা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে, ঢাকার মেট্রোরেলের সাউদার্ন রুট প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধান এবং গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় বা মুজিব কিল্লা নির্মাণের মতো প্রকল্পগুলো শিক্ষার প্রসার এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত।
সতর্ক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের পাশাপাশি নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই অত্যন্ত জরুরি। চিলমারীতে নদীবন্দর নির্মাণ বা কুমিল্লায় টেকসই কৃষি প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলো দেশকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে পারে। তবে, এগুলোর দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত এবং আর্থিক প্রভাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
রাষ্ট্রীয় কল্যাণের প্রশ্ন
সরকারের এই পদক্ষেপ কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় রোধ করবে এবং প্রাসঙ্গিক প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনবে। তবে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি—যাতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো স্থগিত বা বন্ধ না হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে এই উদ্যোগটি রাষ্ট্রীয় কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশেষ করে ঢাকার মেট্রোরেলের সাউদার্ন রুট প্রকল্প, যশোরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, নেত্রকোণা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ জেলার সঙ্গে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্প এগুলো বাদ দেয়ার আগে পুনর্বিবেচনা ও জনমত নেয়া প্রয়োজন। পিছিয়ে থাকা ভাটি অঞ্চল নেত্রকোণার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখিত দুটো প্রকল্প বিরাট সম্ভাবনাময়। তাই এই প্রকল্পগুলোর নাম পরিবর্তন করে হলেও বাস্তবায়ন জরুরী ।
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক স্বচ্ছতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের একটি ইতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিত রাখার ফলে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও গভীর গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।