গত বছরের নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন ভূমি অফিসে স্থবির হয়ে পড়েছে জমি নিবন্ধন কার্যক্রম। নামজারি, খাজনা আদায়, খতিয়ান ও ডিসিআর সংগ্রহসহ জমির সব ধরনের সেবা কার্যক্রম এখন অব্যাহত সমস্যায় পড়ে গেছে। সার্ভার সমস্যার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে সেবা নিতে আসা জনগণ ফিরিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীসহ সারা দেশের ভূমি অফিসগুলোতে একের পর এক দৌড়ঝাঁপ করেও প্রয়োজনীয় কাজ না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা হতাশ। খাজনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না, জমির নামজারি করা যাচ্ছে না, এমনকি কোনো তথ্যও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে বিভিন্ন প্রয়োজনে যেমন জমি বিক্রি করতে পারছেন না, তেমনি ব্যবসা বা পরিবারে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভূমিসেবার সেবা নিশ্চিতে কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। তবে নতুন সফটওয়্যার চালুর পর থেকে অনেক জায়গায় প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং সেবা শিথিলতায় সেবাগ্রহীতারা দীর্ঘ সময় ধরে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পটুয়াখালী, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, বগুড়া, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি অফিসে অব্যাহত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের পটিয়া, রাজশাহীর চারঘাট, খুলনার ডুমুরিয়া, বগুড়ার সদর এবং মেহেরপুরের বিভিন্ন অফিসে জমির নামজারি ও খাজনা কার্যক্রম থমকে রয়েছে।
রেহানা পারভীন নামে একজন ক্যান্সার রোগী বলেন, “আমি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চাই, তবে জমি বিক্রি করতে পারছি না কারণ সার্ভার সমস্যায় জমির তথ্য হালনাগাদ হচ্ছে না।” এমন পরিস্থিতিতে তিনি সরকারের কাছে দ্রুত সেবা ব্যবস্থা সচল করার দাবি জানান।
এদিকে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ জানিয়েছেন, সার্ভার আপডেট করার কাজ চলছে এবং আগামী মার্চ মাস থেকে সেবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে কিছু সমস্যা ছিল, তবে এখন সমস্যা অনেক কমে এসেছে।”
রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গার ভূমি অফিসে একাধিক কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, তারা সার্ভার সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা মো. শাহিন আলম বলেন, “পাশাপাশি খাজনা আদায়ের হার ৮০ শতাংশ কমে গেছে।”
এছাড়া মেহেরপুরে গত তিন মাস ধরে খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে সার্ভার সমস্যায় পড়েছেন হাসানুল মারুফ। তিনি বলেন, “আগে খাজনা দিতে সমস্যা ছিল না, তবে এখন সার্ভারে আমার জমির কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না।”
ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান, সফটওয়্যারের কিছু ত্রুটি এখনও রয়েছে, তবে এটি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, “৩০ শতাংশ সমস্যা সফটওয়্যারের, বাকি সমস্যা ইন্টারনেট সংযোগের কারণে হচ্ছে।”
ভূমি মন্ত্রণালয় এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানানো হলেও, ভুক্তভোগীরা দ্রুত সেবা পেতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।