ময়মনসিংহের আর.এফ.এল. মোড় এলাকায় চলমান ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে ১৫২৩, ১৫৩৯, ১৫২৭ এবং ১৫২৮ দাগে অবস্থিত সম্পত্তিতে গুরুতর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ঢাকা বরাবর একটি সুনির্দিষ্ট আবেদনপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এই আবেদনপত্রে অবিলম্বে উল্লেখিত অভিযোগগুলোর তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগপত্রে ড. হাবিবুর রহমান, নাজনীন ফেরদৌস এবং সাইদুর রহমান গং-এর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে:
১৫২৩ দাগের সম্পত্তি (মালিক: নাজনীন ফেরদৌস, স্বামী: ড. হাবিবুর রহমান): অভিযোগ অনুযায়ী, এই দাগে ৭ তলা ফাউন্ডেশন ও ৫ তলা ছাদ বিশিষ্ট দালান ঘরের উল্লেখ থাকলেও, ফাউন্ডেশন এবং লিফটের অবকাঠামো সংক্রান্ত তথ্যে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে। বিল্ডিংটি ২০২৩/২০২৪ সালে অধিক অর্থ উত্তোলনের উদ্দেশ্যে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। ড. হাবিবুর রহমান ও নাজনীন ফেরদৌস সার্ভেয়ার আজহারুল ইসলাম ও কবির হোসেনকে প্রভাবিত করে অতিরিক্ত ভ্যালুয়েশন করিয়ে বেশি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এই বিল্ডিং অডিট করে প্রকৃত মূল্য নির্ধারণপূর্বক টাকা প্রদান আবশ্যক বলে দাবি জানানো হয়েছে।
১৫৩৯ দাগের সম্পত্তি (মালিক: ড. হাবিবুর রহমান): এখানে ৫ তলা ফাউন্ডেশন ও ২ তলা ছাদ বিশিষ্ট দালান ঘরের উল্লেখ থাকলেও, এটি প্রকৃতপক্ষে ৫ তলা ফাউন্ডেশন (পাইলিং সহ) নয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। ড. হাবিবুর রহমান এবং তার ভাই সাইদুর রহমান তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে অস্তিত্বহীন বিভিন্ন ব্যবসা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
১৫২৭ ও ১৫২৮ দাগের সম্পত্তি (গোডাউন, মালিক: নাজনীন ফেরদৌস, স্বামী: ড. হাবিবুর রহমান): গোডাউনগুলোর বিবরণীর সাথে প্রকৃত অবকাঠামোর সামঞ্জস্য নেই এবং অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের জন্য সার্ভেয়ারদের যোগসাজশে অতিরিক্ত অবকাঠামো উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫২৭ নং দাগে, অধিগ্রহণভুক্ত এলাকার বাইরের স্থাপনার (সম্পূর্ণ গোডাউন) বিল করার চেষ্টা চলছে, যা গুরুতর অনিয়ম।
১৫৩৯ দাগের সম্পত্তি (মালিক: সাইদুর রহমান): এই দাগে ৭ তলা ফাউন্ডেশন ও ৬ তলা ছাদ বিশিষ্ট দালান ঘরের ক্ষেত্রে সার্ভেয়ারকে প্রভাবিত করে অতিরিক্ত বিবরণী উল্লেখ করা হয়েছে, যা বেশি টাকা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সাইদুর রহমান তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে অস্তিত্বহীন ব্যবসা দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করছেন।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য ও দুর্নীতির ইঙ্গিত: অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ড. হাবিবুর রহমান এবং সাইদুর রহমান গং-এর সাথে তাদের শরীকানাদের একটি বাটোয়ারা মামলা (মামলা নম্বর: ৩৬৭/২০২৪) ময়মনসিংহ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে চলমান রয়েছে। এই মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও তারা অফিস ম্যানেজ করে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছেন। এছাড়াও, ড. হাবিবুর রহমান ও নাজনীন ফেরদৌস রাজনৈতিক সুবিধাভোগী এবং ড. হাবিবুর রহমানের শ্যালক মুশফিকুর রহমানের (যিনি ৫ই আগস্টের পূর্বে কুমিল্লা জেলার ডিসি ছিলেন) নাম ভাঙিয়ে নিজ এলাকায় এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে প্রভাব খাটাচ্ছেন, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি স্পষ্ট দৃষ্টান্ত। সার্ভেয়ার আজহারুল ইসলাম ও কবির হোসেনের যোগসাজশ অতিরিক্ত ভ্যালুয়েশনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।
দাবিকৃত প্রতিকার: এই গুরুতর অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে, অভিযোগকারীগণ নিম্নোক্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন: একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে উল্লেখিত সকল অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশ প্রদান। ১৫২৩, ১৫৩৯, ১৫২৭ ও ১৫২৮ নং দাগে উল্লিখিত সকল স্থাপনা (বিল্ডিং ও গোডাউন) এবং প্রদর্শিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি বিস্তারিত এবং কারিগরি অডিট পরিচালনা করা, যাতে প্রকৃত অবস্থা ও মূল্য নিরূপণ করা যায়।
তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের অনুকূলে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ সকল প্রকার অর্থ ছাড় অবিলম্বে স্থগিত রাখা।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, জড়িত সকল ব্যক্তি (মালিক, সার্ভেয়ার এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা) এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোরতম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রমাণের পর এই অভিযোগগুলো বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ধারা ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৩ (সম্পত্তির অসৎ ভাবে আত্মসাৎ), ৪০৬/৪০৯ (অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ; জালিয়াতি ও জাল দলিল ব্যবহার সংক্রান্ত ধারা ৪৬৪, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১; মিথ্যা সাক্ষ্য বা প্রমাণ তৈরি সংক্রান্ত ধারা ১৯১, ১৯২, ১৯৩; এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত ধারা ১২০ক, ১২০খ এর আওতায় পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপকতা এবং সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে, কেবল মূল কর্তৃপক্ষ নয়, বরং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য উচ্চপদস্থ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছেও এই অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক (দুদক) ময়মনসিংহ, বিভাগীয় কমিশনার ময়মনসিংহ, জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ, পুলিশ সুপার ময়মনসিংহ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ময়মনসিংহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ময়মনসিংহ জেলা এবং সাংবাদিক সংগঠন/প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে এই অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে অভিযোগের গুরুত্ব সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা এবং দ্রুত ও সমন্বিত সমাধানের পথ সুগম করার চেষ্টা করা হয়েছে।