অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং বাংলাদেশেও এই দৃশ্য অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়। যদিও এখনও ঢাকায় নির্মিত ভবনের উচ্চতা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের পাঁচ ভাগের এক ভাগও হয়নি, তবুও শহরের বিভিন্ন এলাকায় সুউচ্চ ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, যার উচ্চতা ৮২৮ মিটার (২,৭১৭ ফুট), ঢাকা শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবন সিটি সেন্টারের উচ্চতা মাত্র ১৭১ মিটার (৫৬১ ফুট)। তবে ঢাকায় বর্তমানে ৫০০ ফুট উচ্চতার বেশ কিছু ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এই ভবনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শান্তা হোল্ডিংসের পিনাকেল ও ঢাকা টাওয়ার, ট্রপিক্যাল হোমসের টিএ টাওয়ার, সেনা কল্যাণ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসের এসকেএস স্কাইরিচ এবং মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমজিআই টাওয়ার।
১৯৩০-এর দশকে নিউইয়র্কের ক্রাইসলার ভবন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ২০০০ সালের পর, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, এবং ২০২৫ সালে পৌঁছাতে, বিশ্বজুড়ে ১০০টি আকাশচুম্বী ভবনের মধ্যে বেশিরভাগই নির্মিত হয়েছে গত দুই দশকে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার আগে। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, সিটি সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকায় আকাশচুম্বী ভবনের যাত্রা শুরু হয়। তবে বর্তমানে ৫০০ ফুট বা তার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণে ঢাকার অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে।
ঢাকা শহরের গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ ও মালিবাগ এলাকায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে নতুন আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের কাজ। এসব ভবনের মধ্যে কিছু ভবন ৪০ তলা থেকে ৫০ তলা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে। এসব ভবনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন—হাসপাতাল, হোটেল, সুপারশপ, কনফারেন্স হল, রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল, হেলিপ্যাড এবং থ্রিডি মুভি থিয়েটারও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
উল্লেখযোগ্য কিছু ভবনের মধ্যে শান্তা হোল্ডিংসের ৫০০ ফুট উচ্চতার পিনাকেল, মেঘনা গ্রুপের এমজিআই টাওয়ার, ট্রপিক্যাল হোমসের টিএ টাওয়ারসহ আরও অনেক ভবন রয়েছে, যা ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকার ভূদৃশ্য বদলে দেবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বর্তমানে ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকার উচ্চতা সীমাবদ্ধতা কিছুটা শিথিল করেছে। ভবিষ্যতে এসব এলাকায় ৫০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে, নির্মাণকাজ শুরুর আগে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ থেকে ছাড়পত্র এবং ভবনের ট্রাফিক ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস (টিআইএ) নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। এর ফলে, ঢাকার যানজটের ওপর সুউচ্চ ভবনের প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, ভবনের কাঠামোগত নকশা যেকোনো অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করার পর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবনগুলো সুরক্ষিত থাকে।
ঢাকা শহরে আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের প্রবণতা বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের অফিস ঢাকায় স্থানান্তরিত করছে, যা শহরের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন কোম্পানিগুলোর মধ্যে শান্তা হোল্ডিংস, ট্রপিক্যাল হোমস, সেনা কল্যাণ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন সুউচ্চ ভবন নির্মাণে কাজ করছে।
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ঢাকায় আকাশচুম্বী ভবনের সংখ্যা আগামী কয়েক বছরে আরও বৃদ্ধি পাবে, যা নগরায়ণ এবং উন্নত জীবনযাত্রার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।