সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ফেসবুক পোস্টের পর ন্যান্সির বাড়িতে পুলিশের অভিযান !

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২২-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭৬

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সমর্থনের কারণে নানা ধরনের বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে অনেক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে ন্যান্সি বিগত সরকারের আমলে তার ওপর হওয়া অন্যায় আচরণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লিখেন, ‘২০১১ সালে প্রজাপতি সিনেমার ‘দু দিকেই বসবাস’ গানটির জন্য আমি সেরা নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে মনোনীত হই। এর পুরস্কার প্রদান করা হয় ২০১৩ সালের মার্চ মাসে। আমার বড় কন্যার অসুস্থতার কারণে আমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি। পরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কারটি সংগ্রহ করি।’

২০১৩ সালের শেষে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট লিখেছিলেন ন্যান্সি। তিনি লিখেন, ‘আমার পোস্টের সারমর্ম ছিল- শুধুমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য যারা আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন, তাদের সময় এখন ফিরে আসার। তখন অনেকেই বিগত সরকারের সমালোচনা করেছিল। কিন্তু আমার পোস্টটি রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরের দিন মধ্যরাতে আমার নেত্রকোনার বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। তারা জানায়, আমার বাড়িতে জামাত-শিবিরের জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে। আমি তাদের তল্লাশির অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার ছোট ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। পরে আমি প্রেস কনফারেন্স করে বিষয়টি জানাই। মামলা থেকে বাঁচলেও হয়রানি বন্ধ হয়নি।’

ন্যান্সির মা বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সভাপতি ছিলেন। তিনি লিখেন, ‘আমার মা আমৃত্যু নেত্রকোনা জেলা জাসাসের সহসভাপতি ছিলেন। অথচ পুলিশ আমার বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা আছে বলে অভিযোগ আনে। এ ঘটনার পর থেকেই আমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।’

২০১৪ সাল থেকে ন্যান্সির স্টেজ শো বাতিল হতে থাকে। তিনি লিখেন, ‘২০১৪ সাল থেকে একের পর এক স্টেজ শো বাতিল হতে থাকে। সিনেমার গান গাওয়া তো স্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়ায়। আমার প্রায় ৩০ লাখ ফলোয়ার সমৃদ্ধ ফেসবুক পেজ গায়েব হয়ে যায়। নতুন করে আইডি খুললেও সেটিও কিছুদিন পর লাপাত্তা হয়ে যেত।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ন্যান্সির জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তিনি লিখেন, ‘২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সমর্থক হিসেবে আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। চেনা মুখগুলো অচেনা হতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা জোর দাবি তুলে, শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করা আমাকে কেন জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হলো? তাদের ভাব এমন যেন পুরস্কার আমার অর্জন নয়, শেখ হাসিনা ভিক্ষা দিয়েছেন।’

মানসিক চাপে ন্যান্সি ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না। তিনি লিখেন, ‘২০১৪ সালে আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শেখ হাসিনার সমর্থকদের উল্লাস আমাকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়।’

নতুন করে লড়াই শুরু করেন ন্যান্সি। তিনি লিখেন, ‘মন শক্ত করে কাজ খোঁজা শুরু করি। বেশিরভাগ জায়গায় আমি অলিখিতভাবে ব্ল্যাক লিস্টেড। তবে স্নেহাশিস ঘোষের ব্যানারে সিডি চয়েসের মাধ্যমে একের পর এক গান প্রকাশ পেতে থাকে। সাউন্ডটেকের ব্যানারে আহমেদ রিজভীর পরিচালনায় আমার একক অ্যালবাম ‘ভালোবাসো বলেই’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া গাংচিল মিউজিক, বাংলা ঢোল, রঙ্গন মিউজিক, সিএমভির সাথেও কাজ করেছি। করোনা পরবর্তী সময়ে প্রো টিউন ও অনুপমের ব্যানারে গান গাই।’

টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তাকে খুব কম ডাকা হতো। ন্যান্সি লিখেন, ‘টিভি চ্যানেলগুলোতে কদাচিৎ ডাক পেতাম। তবে বাংলাভিশন চ্যানেলটি আমাকে নিয়মিত ডাকত। আমার দুই ভাইও বাংলাভিশনে কর্মরত।’

সবশেষে ন্যান্সি লিখেন, ‘বিগত ১১ বছরে আমি মাত্র ১১টি সিনেমার গান গেয়েছি। আমার সব জনপ্রিয় গান ২০১৪ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এ কারণেই আর কখনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাইনি। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে ব্ল্যাক লিস্টেড হয়েও আমি টিকে আছি আমার মনোবল ও ভক্তদের ভালোবাসায়।’

ন্যান্সির এই স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে একজন শিল্পীর সংগ্রাম ও প্রতিবাদের গল্প, যা সমাজে শিল্প ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরে।