ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে দালাল ও ঘুষ ছাড়া জমির খতিয়ানের নকল (পর্চা) পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে আবেদন করেও কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে কিংবা দালাল না ধরলে ভূমিসেবা মিলছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারাও ভোগান্তিতে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জমির খতিয়ানের পর্চা সংগ্রহ করতে আগে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হতো। তবে ২০২১ সাল থেকে অনলাইনে ভূমিসেবা চালু হওয়ায় ডাকযোগে বা সরাসরি কার্যালয় থেকে পর্চা সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। ডাকযোগে পেতে ১৪০ টাকা এবং সরাসরি সংগ্রহ করতে ১০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হলেও, অনেকেই মাসের পর মাস ঘুরেও পর্চা পাচ্ছেন না।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার কৃষক রঞ্জু মিয়া জানান, গত ২৬ জানুয়ারি অনলাইনে আবেদন করার পরও রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান তাকে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছেন। তিনি বলেন, "মোখলেছুর রহমান অতিরিক্ত টাকা চাইছেন অথবা দালালের মাধ্যমে নিতে বলছেন। দালাল ৩ হাজার টাকা চাইছে, যা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।"
হালুয়াঘাটের কৃষক রবি মিয়ার অভিযোগ, তিন মাস আগে অনলাইনে আবেদন করেও তিনি জমির খতিয়ান পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, "আটবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসেছি, কিন্তু রেকর্ডকিপার ও অন্যান্য কর্মচারীদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় এখনও কাগজ মেলেনি।"
এমনকি আইনজীবীরাও এই সমস্যার শিকার হচ্ছেন। ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল কাদের বলেন, "রেকর্ড রুম থেকে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের অবস্থা তো আরও খারাপ। দালাল বা কর্মচারীদের টাকা দিলেই কেবল কাগজপত্র মেলে।"
মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী শেখও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, "মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমরা সময়মতো সেবা পাচ্ছি না। সরকারের উচিত এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া।"
রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "সার্ভারে জটিলতার কারণে সেবা দেওয়া বিলম্বিত হচ্ছে।" তবে তিনি কতদিন ধরে এই সমস্যা চলছে তা স্পষ্ট করেননি।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, "ভূমিসেবা কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম বা ঘুষের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
এদিকে, ভুক্তভোগীরা দ্রুত সমস্যার সমাধান চেয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলছেন, অনলাইন সেবার সুবিধা থাকলেও দালাল ও ঘুষের কারণে তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।