জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে শীর্ষ চারটি পদে তিনটিতে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। অপরদিকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা করে।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম। যুগ্ম সম্পাদক (এজিএস) পদে ছাত্রদের মধ্যে ফেরদৌস আল হাসান এবং ছাত্রীদের মধ্যে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুইজনও ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী।
ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় সংসদের মোট ২৫টি পদের মধ্যে ২১টি পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। বিশ্লেষকদের মতে, এটি সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রশিবির প্যানেলের অন্যতম বড় বিজয়।
নির্বাচনে অন্যান্য নির্বাচিতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু ওবায়দা ওসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক মো. শাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. রায়হান উদ্দীন, নাট্য সম্পাদক মো. রুহুল ইসলাম, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আক্তার লুবনা, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মো. মাহাদী হাসান, তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন, সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক (নারী) নিগার সুলতানা, সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক (পুরুষ) মো. তৌহিদ হাসান, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক হুসনী মোবারক এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক মো. তানভীর রহমান। এরা সবাই শিবির সমর্থিত জোটের প্রার্থী।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মহিবুল্লাহ শেখ জিসান এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান কিরন। এছাড়া সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সমর্থিত আহসাব লাবিব।
কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে নির্বাচিত হয়েছেন নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান ও নুসরাত জাহান ইমা। কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা এবং মো. আলী চিশতী। এই ছয়জনও শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এরপর টানা ৪২ ঘণ্টা ধরে চলে ভোট গণনা। মোট ভোটার ছিলেন ১১,৭৫৯ জন, যার মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
জাকসুর ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ১৭৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, এবং যুগ্ম সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রার্থী ছিলেন। নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ জন।
নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল মোট আটটি পূর্ণ ও আংশিক প্যানেল। তবে ভোট গ্রহণ শুরুর পর কারচুপির অভিযোগ তুলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। বর্জনকারীদের মধ্যে ছিল প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের 'সম্প্রীতির ঐক্য', ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের 'সংশপ্তক পর্ষদ' এবং স্বতন্ত্রদের 'অঙ্গীকার পরিষদ'।
এবারের নির্বাচনে ছাত্ররাজনীতিতে দীর্ঘদিন পরে জাকসু কার্যকর হওয়ার আশায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও ভোট বর্জন, প্যানেল বিভাজন এবং ভোট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তারপরও শিবির সমর্থিত জোটের দখলে অধিকাংশ পদ চলে যাওয়ায় নতুন নেতৃত্বকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে জাহাঙ্গীরনগর অঙ্গনে।