সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

জামালপুরে অসময়ে যমুনার ভাঙন, আতঙ্কে স্থানীয়রা!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৯-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০২৪

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বড়খাল থেকে খোলাবাড়ী পর্যন্ত যমুনার তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চরডাকাতিয়া গ্রামে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনে অন্তত ১৫টি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, চলতি বছরের অসময়ে যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। চরডাকাতিয়া গ্রামের যেসব এলাকায় ভাঙন চলছে, সেখানেই রয়েছে চরডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ এবং শতাধিক বসতবাড়ি। যদি এই ভাঙন অব্যাহত থাকে, তবে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এসব স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

চরডাকাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা সালমান হোসেন বলেন, “বিগত সময়ে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু এ বছর বর্ষা আসার আগেই এই ভাঙন শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।"

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে দেওয়ানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্রতি বছর বর্ষার সময়। ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে চলে গেছে হলকারচর, কেল্লাকাটা, ডাকাতিয়াপাড়া, বড়খাল, বওলাতলী, চরডাকাতিয়াপাড়া ও খোলাবাড়ী এলাকা। এই ভাঙনের কারণে হাজার হাজার মানুষ তাদের ভিটেমাটি, আবাদি জমি হারিয়ে এখন বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

চরডাকাতিয়া গ্রামের আফরোজা বেগম জানান, “এ বছর যদি এভাবে ভাঙন চলতে থাকে, তবে পুরো চরডাকাতিয়া গ্রাম নদী গর্ভে চলে যাবে। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়বে।"

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলে ১১ হাজার বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। তবে, স্থানীয়রা মনে করছেন, যমুনার প্রবল স্রোতের কারণে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। তাদের মতে, জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী এবং টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চরডাকাতিয়া গ্রামের ময়নাল হক বলেন, “এ পর্যন্ত যমুনা নদী সাতবার আমার বাড়ি ভেঙে নিয়েছে। এই বছরেও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। ফেলে দেওয়া জিওব্যাগগুলি স্রোতে ভেসে গিয়ে আগের মতোই ভাঙন শুরু হবে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান জানান, “এই স্থানটিতে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে আপাতত স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে, একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে, এবং সেই স্টাডি পাস হলে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। আপাতত ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।"

এদিকে, স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ সাদার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, "আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত এই এলাকায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।"

স্থানীয়রা এখন গভীর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, বিশেষত যেহেতু যমুনা নদীর ভাঙন তাদের জীবিকা, বসতভিটা এবং ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে ফেলেছে। তাই তারা জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী নদী শাসনের দাবি জানাচ্ছেন।