জীবনযাত্রা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

কিছু শিশুর সর্দি-ঠান্ডা লেগে থাকে কেন!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২১-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১১৪

কোনো কোনো শিশুর সারা বছর ঠান্ডা ও সর্দি লেগে থাকে। সব সময় ঠান্ডার ওষুধ খেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘন ঘন সর্দি ও ঠান্ডা লাগার কারণ অ্যালার্জি। কারও কারও বারবার ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এ সমস্যা হয়। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, আবহাওয়া পরিবর্তন ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকেও এই সমস্যা হয় বেশি।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের। সিজনাল ও পেরেনিয়াল। সিজনাল রাইনাইটিসে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার কারণ ধুলা ও ফুলের রেণু। পেরেনিয়াল রাইনাইটিস ঘরে জমে থাকা ধুলার সঙ্গে বিভিন্ন ফাঙ্গাস ও পতঙ্গ শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার কারণে হয়। শ্বাসের মাধ্যমে অ্যালার্জেন শরীরে ঢুকলে অ্যালার্জি হয়, যখন ফুসফুসে প্রভাব ফেলে তখন দেখা দেয় অ্যাজমা। শিশুরা সারা দিন ভালো থাকে, কিন্তু রাত হলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। গলাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, কাশি হাঁচি জ্বর, কানে ও মুখে চাপ অনুভব করা, স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসে।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে ৪-৬ বার এবং শিশুর ১০-১২ বার সর্দিজ্বর হওয়া স্বাভাবিক। শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং বেশিসংখ্যক শিশু আক্রান্ত হয়। নাসারন্ধ্রের ভেতরে মিউকাস লাইনিং অতিক্রম করে জীবাণু প্রবেশ করলে নাসারন্ধ্রের ভেতর অতিরিক্ত সর্দি জমা হয়, যাকে ‘রাইনোরেয়া’ বলে।

শিশুর সর্দি-ঠান্ডার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে হলে এর কারণ অ্যালার্জি কি না বুঝতে কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে চোখ চুলকানো, অ্যাজমা, চোখ লাল ও চুলকানি হয়। মডিফায়েড স্কিন প্রিক টেস্ট করে দেখা যায় কী কারণে শিশুর এই সমস্যা হচ্ছে। ভাসমান ধূলিকণা, ঘরে জমে থাকা ধুলা, মাকড়সার জাল, তেলাপোকা, বিভিন্ন ফুলের রেণু, কুকুর, বিড়ালের পশম, কটনডাস্ট (বালিশ, বিছানার তুলা), বিভিন্ন রকমের খাবার থেকে ও জিনঘটিত কারণে শিশুরা আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসায় দেরি হলে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে অ্যাজমা বা অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস হতে পারে। যদি এক মাসের বেশি সময় সর্দি-ঠান্ডা থেকে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসক নাকে ড্রপ ও অন্যান্য ওষুধ দেবেন। অ্যালার্জির জন্য চিকিৎসক নির্দিষ্ট ইমিউনোথেরাপি দিতে পারেন, যা তিন থেকে পাঁচ বছর ধরে চলবে।
প্রতিকার কী

বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুকে মাস্ক পরান। ওয়েট টিস্যু নিয়ে বের হতে পারেন এবং কিছুক্ষণ পরপর শিশুর মুখ মুছে দিতে হবে। ঘরের কার্পেট, বিছানার তোশক পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জি হয়, তাহলে ঘরে জানালা, দরজা বন্ধ রাখা ও প্রয়োজনে ঘরে এয়ারকন্ডিশন চালানো উচিত।

কোনো খাবার থেকে অ্যালার্জি হলে সেই খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে থেকে ফিরে পোশাক পাল্টে হাত-মুখ ও পা ধুয়ে দিতে হবে। ঘুম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দরকার। প্রচুর পরিমাণ তরল খাওয়াতে হবে।

শিশুকে সর্দি-জ্বর থেকে বাঁচতে মিষ্টি আলু, বিটের মূল, কুমড়া খাওয়ানো ভালো। এতে বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে নাক ও ফুসফুসের মিউকোসাল লাইনিংকে শক্ত রাখে। কমলা, আম, তরমুজসহ লাল ফল একই ধরনের কাজ করে। এ ছাড়া খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ ও রসুন থাকলেও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে ঠান্ডা ও সর্দি থেকে শিশুকে বাঁচানো যাবে।

ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা।