সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা বাড়ির সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্ক নেই; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৭-৭-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০২৭

ময়মনসিংহে একটি পুরনো ভবন ভেঙে ফেলার ঘটনায় দেশ-বিদেশে আলোচনার সৃষ্টি হলেও, ভবনটির সঙ্গে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই—এমনটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ময়মনসিংহে যেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব প্রতিবেদনে বাড়িটিকে সত্যজিৎ রায়ের দাদা, সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর সম্পত্তি বলে দাবি করা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। সরকারী নথিপত্র ও স্থানীয় প্রবীণদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, বাড়িটি ময়মনসিংহের এক সময়ের জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল তার কর্মচারীদের থাকার জন্য। জমিদারি ব্যবস্থার বিলুপ্তির পর ভবনটি সরকারের অধীনে আসে এবং পরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন জেলা শিশু একাডেমির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ভবনটি ২০১৪ সাল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং স্থানীয় সমাজবিরোধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভবনটি অপসারণের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিলামের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ভবনটি ভেঙে সেখানে আধা-স্থায়ী ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা শিশু একাডেমির কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হবে। ভবন অপসারণের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, প্রবীণ নাগরিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বুধবার (১৬ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বিশিষ্ট লেখক কাঙাল শাহীন, অধ্যাপক বিমল কান্তি ও কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেন, বাড়িটি রায় পরিবারের নয় এবং এটি ভাঙার পেছনে কোনো ইতিহাস বা ঐতিহ্য নষ্ট হয়নি।

প্রসঙ্গত, এলাকাটিতে ‘হরিকিশোর রায় রোড’ নামের একটি রাস্তা রয়েছে, যা সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ হরিকিশোর রায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তবে এই রাস্তায় রায় পরিবারের যেটি ছিল বলে জানা যায়, সেই বাড়ি বহু আগেই বিক্রি হয়ে যায় এবং বর্তমানে সেখানে একটি বহুতল ভবন রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, কারণ এ ধরনের ভুল তথ্য সামাজিক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এর আগে ভারত সরকার ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব-পুরুষদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে সরকারের সর্বশেষ ব্যাখ্যার আলোকে স্পষ্ট হয়েছে, প্রশ্নবিদ্ধ ভবনটির সঙ্গে রায় পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি সরাসরি শিশু একাডেমির কাজে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।