ঢাকা | বঙ্গাব্দ
জীবনযাত্রা গৃহ ও আবাসন

নেত্রকোনার নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে

  • আপলোড তারিখঃ 01-01-25 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 100006 জন

নেত্রকোনার নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে

তবে নদ-নদীর এমন দুর্দশার জন্য আন্ত:সীমান্ত নদী প্রণালী ঠিক না রাখা, দীর্ঘদিন যাবত নদীগুলো খনন না করা, পাহাড়ি ঢল এবং বিগত সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করছেন নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মীরা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৭টি বড় নদ-নদীসহ মোট ১২২টি ছোট-বড় নদী ও খাল ছিল। জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃহৎ ৭টি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার ও ছোট বড় ১১৫টি নদীর দৈর্ঘ্য ৫১২৫.৬ কিলোমিটার। জেলার ১২২টি নদ-নদীর মধ্যে বড় ৭টি নদ-নদী হলো-সোমেশ্বরী, কংস, মগড়, উব্দাখালী, ধনু, ভোগাই ও গুমাই। ছোট ১১৫টি নদীগুলো বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে।

এর মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ১৮টি খাল রয়েছে। সেগুলো হলো- হরিখালি, নাপিতখালি, ডুপিংখালী, মগড়া, খোশাই, ঝিটাই, রেজখালী, গুরিয়ার, নগুয়া, ঠাকুরকোণা, চুচিয়া, ধলাই, দরিজাগি, সিদলী, জাহাঙ্গীরপুর, বালচ, মরাখালী ও তিলকখালী খাল, দুর্গাপুর উপজেলায় নালিয়া আগা, ছুখাইখালী, বালচ নদী, ঝিনাইগাতি, আরবাখালী, নাহিতখালী, সত্তর মুন্সি, বানেস্বরী ও পাগরিয়া খাল নামে ৯টি ছোট-বড় খাল রয়েছে, কলমাকান্দা উপজেলার ১৪টি নদী ও খাল হল-জাঙ্গার, গুতুরা, সিদ্ধখলা, আরিন্দাখালী, গোবিন্দপুর, বড়ইউন্দু, গোলামখালী, মান্দাউড়া, মহাদেও নদী, বাইন বিল, শ্যামপুর, গুমাই নদী, দিলুরা ও ভোগাই, কেন্দুয়া উপজেলার ১৬টি নদী ও খাল হল- রাজি, সাইডুলি, পাটেশ্বরী, হুচিয়া, তুরুকপাড়া, ডুমরি, রাজপত, ওয়াই, চরপুর, সান্দিকোণা, কলতরিল, কুরদিঘা, সুতি, কচন্দরা, বালকি ও সামুকজানি, বারহাট্টা উপজেলায় ২৬টি খাল রয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে- মরা কংস, মরা বিশনাই, বড় ধলা, ঘালিয়ামারি, নানিয়া চাটগাঁও, নয়া বিল, পিয়াইন, দত্তখিলা, ঘাবারকান্দা, বারই, আমতলা, চাপারকোনা, ধলেশ্বরী, বাঘাইর, মহেশখালী, ধলা, গুলামখালী, রৌহা, নন্দী বাড়ী, বড়াপাড়া, টংগা, কান্দাপাড়, বড়িখাল, কামালপুর, শিববাড়ী ও বালিজুড়ী, পূর্বধলা উপজেলায় ১১টি খাল হল- কালিহর, বালিয়া, লাউয়ারী, ফলাখালী, খসখসিয়া, বারাবারির, ধলাই, মরা, পাছুয়া, বলজানা ও সুয়াইর, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ৭টি খাল হল- ঘোড়াউত্রা, মরা ধলাই, বেলদরিয়া, দাইরের, কলুংকা, পাপমারা ও নৌকা ভাঙা, খালিয়াজুরী উপজেলায় ৭টি নদী ও খালের মধ্যে রয়েছে বিশ্বহরি ডুলিয়াজান, ডুলনিরখাল, সেলা, পুটিয়া, নাইয়রী, বয়রা ও বৌলাই, মদন উপজেলায় ৫টি খাল রয়েছে। তা হল- বালুই, বয়রাহালা, নাসিরখালী, পাতুনিয়া ও আন্দারমানিক এবং আটপাড়া উপজেলার ২টি খাল হল পাগলাখালী ও পঞ্চখালী খাল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এসব নদী-খালের বিভিন্ন অংশ যে যার মতো দখলে নিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে ধান চাষ করছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে নীরব থাকায় সচেতন মহলের ধারণা, মানুষ একদিকে নদীর উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অপরদিকে সরকার বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারাচ্ছে।

কংস, মগড়া, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী ও ধনু নদীর দুই পাড়ের কৃষকরা জানান, তারা আগে নদীর পানি দিয়ে সারা বছর ঘর, গৃহস্থালির কাজ করতো। বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। এখন আর জমিতে সেচ দেয়ার মতো পানি নেই।

তারা আরও জানান, এলাকার জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেলেসহ সাধারণ মানুষ। দুই তীরে যাদের জমি আছে তারাই নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। কেউ কেউ সুবিধা অনুযায়ী নদী থেকে বালি উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় অবৈধভাবে ইটের ভাটা বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে।

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী মো. অহিদুর রহমান বলেন, জেলার সব নদ-নদীগুলোকে চিহ্নিত করে পুনরুদ্ধার ও গতিশীল করা এখন সময়ের দাবি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান জানান, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি নদী ও বেশ কয়েকটি খাল খননের কাজ চলমান রয়েছে। আরও ২৪টি খাল খননের প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, যে সব নদ-নদী ও খাল খননের প্রয়োজন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তার একটি তালিকা তৈরি করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। নদীর জায়গা থেকে সব ধরনের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।