নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর না করায় দেশের ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাময়িক অনুমতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আইন অনুযায়ী স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১) এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ এর ৭(২) ও ১১(২) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায়, আইনটির ১২(১) ধারা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
আইনের ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি সাময়িক অনুমতির মেয়াদের মধ্যে বা নবায়নকৃত মেয়াদের মধ্যে পূর্ণ সনদের জন্য আবেদন না করে অথবা সনদপ্রাপ্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এই নির্দেশনার আওতায় পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাতমসজিদ রোডের ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, রাজারবাগের দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, গুলশানের প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বনানীর প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, শ্যামলীর আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, পান্থপথের সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি এবং মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস।
এছাড়াও, সিলেটের নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, কিশোরগঞ্জের ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ফেনীর ফেনী ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং চট্টগ্রামের চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতিতে পরিচালিত হচ্ছিল এবং প্রতিষ্ঠার পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও তারা এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে পারেনি। ফলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের শর্ত তারা পূরণ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, “যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের কিছুটা সময় দেওয়া হবে। তবে যারা কোনো উদ্যোগই নেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না যাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।