বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রিয় নেতা, সংস্কারক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক পোপ ফ্রান্সিস ইস্টার সোমবার সকালে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তা বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভ্যাটিকান ক্যামেরলেনগো কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল জানান, “আজ সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রোমের বিশপ ফ্রান্সিস স্বর্গীয় পিতার সান্নিধ্যে ফিরে গেছেন। তার পুরো জীবনই ছিল প্রভু ও চার্চের সেবায় উৎসর্গিত।”
তিনি আরও বলেন, “পোপ আমাদের দেখিয়ে গেছেন কীভাবে গসপেলের মূল্যবোধকে বিশ্বাস, সাহস ও ভালবাসার মাধ্যমে জীবন্ত রাখতে হয়। তিনি ছিলেন দরিদ্র, প্রান্তিক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি সহানুভূতির এক আলোকবর্তিকা।”
গত কয়েক মাস ধরে পোপ গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চার্চের কাজকর্মে যুক্ত ছিলেন।
তার মৃত্যু এমন এক সময়ে হলো, যখন মাত্র একদিন আগেই তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ইস্টার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ভ্যাটিকান হোটেলের রিসেপশন কক্ষে অনুষ্ঠিত সে সাক্ষাতে পোপ ভ্যান্সের সন্তানদের জন্য ইস্টার ডিম, রোজারি ও একটি ভ্যাটিকান টাই উপহার দেন।
এ বছরের ইস্টার মাসে রোমের ঐতিহাসিক সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে না পারলেও এক কার্ডিনালের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেন।
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে জন্মগ্রহণকারী হোর্হে মারিও বেরগোলিও ১৯৫৮ সালে এক অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার পর যাজক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৯৬৯ সালে পুরোহিত হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং ১৯৯৮ সালে বুয়েন্স আয়ার্সের আর্চবিশপের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে তিনি কার্ডিনাল নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ-এর পদত্যাগের পর অনুষ্ঠিত প্যাপাল কনক্লেভে তাকেই পোপ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি সেন্ট ফ্রান্সিস অব অ্যাসিসির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফ্রান্সিস’ নামটি গ্রহণ করেন।
পোপ ফ্রান্সিসের papacy-র সময়কালে তিনি ক্যাথলিক চার্চের অবস্থানকে আরও মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন, মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেন এবং অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল অবস্থান গ্রহণ করেন।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতারা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।