জীবনযাত্রা কেনাকাটা ও ভ্রমণ

পর্দা নামলো ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ২১-১-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭২

২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (ডিআইএফএফ) সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ১৯ জানুয়ারি বিকেলে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যিনি উৎসবের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। উৎসবের এই আসরে ৭৫টি দেশের মোট ২০৩টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং উৎসবটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রদর্শকদের জন্য একটি বড় মঞ্চ হয়ে ওঠে।এই বছর, উৎসবে পুরস্কৃত চলচ্চিত্রের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল রাশিয়ার মিখাইল লুকাসেভিস্কি পরিচালিত ‘হয়্যার দ্য হোয়াইট ক্রেন্স ড্যান্স’, যা চিলড্রেন ফিল্ম সেকশনে বাদল রহমান অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘পদাতিক’, যা পরিচালনা করেন সৃজিত মুখার্জী, পেয়েছে বেস্ট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড। স্পেশাল অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে ফিলিপাইনস-এর জসেলিতো আলটারেজোস নির্মিত ‘দ্য গার্ডিয়ান অব অনার’। উইম্যান ফিল্মমেকার সেকশনে স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড পায় ‘মলডোভা’ এবং ‘নট জাস্ট অ্যানি ডে’ সিনেমাগুলো।
এছাড়া, বেস্ট শর্টফিল্ম হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে বুলগেরিয়ার মারিয়া ববেভা নির্মিত ‘স্কারলেট’, এবং বেস্ট ফিচার ফিল্ম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ফ্রান্সের ‘কুম্ভা’, নির্মাতা সারাহ মাল্লেগোল। ডিআইএফএফ-এর বিভিন্ন সেকশনে একাধিক সিনেমা পুরস্কৃত হয়, যেখানে ‘আওয়ার ওউন স্যাডো’ (অগাস্টিনা জেভিয়ের, আর্জেন্টিনা-জার্মানি) বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনের বেস্ট ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পায় রাশিয়ার ‘দ্য এলিয়েন’ (ইভান সসনিন) এবং বেস্ট শর্টফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পায় পর্তুগালের ‘মনটে ক্লেরিগো’ (লুইস কমপোজ)। সেকেন্ড রানারআপ হিসেবে বাংলাদেশের ‘পৈত্রিক ভিটা’ (মোবারক হোসাইন) এবং ফার্স্ট রানারআপ হিসেবে ‘ফুলেরা পোশাক পরে না’ (আসিফ হামিদ) পুরস্কৃত হয় বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে।
এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশন সেকশনের বেস্ট স্ক্রিপ্টরাইটার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন তাকাতো নিশি ও নরিকো ইউয়াসা, জাপানি সিনেমা ‘পারফর্মিং কাউরুস ফিউনারেল’-এর জন্য। এ সেকশনের বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি পুরস্কৃত হয় তুর্কি সিনেমা ‘হোয়েন দ্য ওয়ালনাট লিভস টার্ন ইয়োলো’-এর জন্য দিলসাত ক্যানান।

এছাড়া, বেস্ট অ্যাক্ট্রেস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন দিমান জানদি, তার অভিনীত ইরানি-তাজিক সিনেমা ‘মেলোডি’র জন্য। বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ড পান রাইয়ান সার্লেক, তার অভিনীত ‘সামার টাইম’ সিনেমার জন্য, যেটি পরিচালনা করেছেন বিখ্যাত ইরানি নির্মাতা মাহমুদ কালারি।
এ বছর উৎসবের বিশেষ দিক ছিল চীনা চলচ্চিত্রের জন্য ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেকশন, যা চীন ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদযাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল। চীনা চলচ্চিত্রের পোস্টার এক্সিবিশনও ছিল উৎসবের একটি বিশেষ আকর্ষণ। এ ছাড়া, উৎসবে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে এক সম্মেলন, যা চলচ্চিত্র শিল্পে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করে।

মাস্টারক্লাস সেশনের আয়োজন করা হয় বাংলাদেশসহ সার্বিয়া, চীন এবং নরওয়ের চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের তত্ত্বাবধানে, যা চলচ্চিত্র নির্মাণের বিভিন্ন দিক নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা প্রদান করে। এ ছাড়া, প্রখ্যাত রাশিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক আলেক্সেই ফেদোরচেনকোর রেট্রোস্পেকটিভও ছিল উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ।


প্রধান অতিথি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার বক্তব্যে আগামী দিনে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে পার্মানেন্ট ভেন্যু স্থাপন, নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ এবং বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেন।