জীবনযাত্রা কেনাকাটা ও ভ্রমণ

পর্যটনে সম্ভাবনাময় ময়মনসিংহ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

মজিবুর রহমান মিন্টু

প্রকাশ : ২-২-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫৪৯০

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন খাতটি বর্তমানে দেশের বৃহৎ শিল্পে পরিণত হতে পারে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশ, বাংলাদেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বে এক বিশেষ স্থান দখল করতে সক্ষম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে ময়মনসিংহ, দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মাধ্যমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে।


বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি দেশীয় পর্যটন খাতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। মোবাইল অ্যাপস, ওয়েব টুলস এবং ভার্চুয়াল ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে পর্যটকরা খুব সহজে তাদের ভ্রমণ সংক্রান্ত সেবা পেতে পারছেন। অনলাইনে টিকিট বুকিং, হোটেল রুম রিজার্ভেশন এবং পর্যটন স্পটভিত্তিক তথ্য পাওয়া এখন অনেক সহজ। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে পর্যটকরা নানা জায়গার দর্শনীয় স্থানের তথ্য জানতে পারছেন এবং নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। এসব পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে ভ্রমণবিষয়ক আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।


কক্সবাজার, বান্দরবান, সেন্টমার্টিন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, কুয়াকাটা—এসব জায়গার পাশাপাশি ময়মনসিংহও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোকে পর্যটকদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং অনলাইন ভিত্তিক পর্যটন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের ভ্রমণ শিল্পে বিপুল পরিবর্তন এসেছে।


বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য 'পর্যটন শিল্পের বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি' গত বছর যেমন গুরুত্ব পেয়েছিল, তেমনি বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক ওয়েব পোর্টাল এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত ফেসবুক পেজ সৃষ্টি হয়েছে। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এবং বাংলাদেশ মনিটরের মতো আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলাগুলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি তাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করছে।

এছাড়া, বাংলাদেশের ভ্রমণ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে। পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন বোর্ডের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ আরও পর্যটকবান্ধব করা হচ্ছে। এছাড়া, 'ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট' চালুর মাধ্যমে পর্যটকদের পরিসংখ্যানের সঠিক তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে।


ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে পর্যটন খাতকে বাংলাদেশে এক সম্ভাবনাময় খাতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। সরকার পরিকল্পিতভাবে পর্যটনকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

এছাড়া, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেমন পহেলা বৈশাখ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং প্রাচীন মসজিদ ও মন্দিরগুলো বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে। দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বাড়িয়ে পর্যটন খাতকে একটি লাভজনক শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।


এখন সময় এসেছে গবেষণা ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের। পর্যটক খাতের উন্নতির জন্য তথ্য সংগ্রহ, পরিসংখ্যান এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। আগামী বছরগুলোতে পর্যটন খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নানা উদ্যোগ নিতে পারে এবং পর্যটকরা যদি এই খাতের সুফল বয়ে আনেন, তবে এটি দেশের জন্য একটি বড় অগ্রগতি হবে।