জীবনযাত্রা প্রকৃতি ও পরিবেশ

রাজশাহীতে সর্বোচ্ছ এখন কত তলা দালান আছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ১৮-১-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭৪

রাজশাহীতে আবাসন শিল্পের বিকাশ: নতুন যুগের সূচনা

রাজশাহী শহরের ঐতিহ্যবাহী জজ আদালত ভবন, যা ১৮৬৪-৬৫ সালে ফরাসি প্রকৌশলী ই এস বি পেরেইরার তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছিলেন, আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় দেড় শ বছর আগে নির্মিত এই ভবন আজও রাজশাহীর স্থাপত্য ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এই দীর্ঘ সময়ে রাজশাহীর নাম, নগরায়ণ ও নির্মাণ শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

১৮০০ সালের দিকে রাজশাহী ছিল একটি ছোট শহর, যার নাম ছিল রামপুর-বোয়ালিয়া। সে সময় এই শহরের প্রশাসনিক দপ্তর নাটোরে ছিল এবং পরে ১৮৫৫ সালে প্রশাসনিক সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হয় বুলনপুরে, যা বর্তমানে জজ আদালত ভবন এলাকায় অবস্থিত। এরপর ১৯২৯ সালে রাজশাহী শহরের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘রাজশাহী’ হয়। এই সময়েই শহরে অবকাঠামোগত উন্নতি এবং নতুন নতুন স্থাপত্যের সূচনা হয়।

বর্তমানে, রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসার উন্নতি ঘটেছে এবং শহরের বিভিন্ন এলাকা, যেমন পদ্মা আবাসিক এলাকা, উপশহর, লক্ষ্মীপুর, সাহেববাজার, সাগরপাড়া, সিপাইপাড়া, সিঅ্যান্ডবির মোড় এবং বর্ণালীর মোড়, একে একে নগরবাসীর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষভাবে পদ্মা আবাসিক এলাকা এখন বসবাসের জন্য সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত।

বাড়ছে আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা

১৯৮০ সালের শেষ দিকে সিঅ্যান্ডবি মোড়ে প্রথম ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে জীবন বীমা করপোরেশন, যা তখনকার সময়ে ছিল শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবন। এরপর, ২০০৬ সালে রাজশাহীতে বাণিজ্যিক আবাসন ব্যবসার সূচনা হয় এবং ২০১৩ সালে রহমান ডেভেলপার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস দ্বারা নির্মিত দৈনিক বার্তা ভবনটি শহরের সবচেয়ে বড় আয়তনের ভবন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

বর্তমানে, শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে পরিচিত ২২ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। এর পাশাপাশি, ২০১১ সালে কল্পনা হলের মোড়ে নির্মিত ১৬ তলা স্বচ্ছ টাওয়ারও শহরের আধুনিক আবাসন রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

নগরায়ণ ও আবাসন ব্যবসার প্রবৃদ্ধি

রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন (রেডা) ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শহরের আবাসন ব্যবসা আরও গতিশীল হয়েছে। বর্তমানে, রাজশাহীতে ৩০টিরও বেশি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে এবং শহরের ৭০-৮০ শতাংশ ভবন রেডার সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে পারফেক্ট লিভিং প্রপার্টিজ লিমিটেড, আল-আকসা ডেভেলপার, দিমা, এবং স্বচ্ছ টাওয়ারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নগর–বিশ্লেষক এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

নগর–বিশ্লেষক আহমদ সফিউদ্দিন মন্তব্য করেন, "রাজশাহীতে আবাসন শিল্পের বিস্তার শহরের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। তবে আরডিএর (রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এবং আরও উন্নত নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলে, এটি শহরের উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।"

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইলমী ফরিদাতুল বলেন, "আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের আবাসন সমস্যার সমাধান হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে আরও বেশি নগর–পরিকল্পনাবিদদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এগুলি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয়।"

রাজশাহী শহরের আবাসন শিল্পের বিস্তার এবং এর সঙ্গে জড়িত কার্যক্রম ইতিবাচকভাবে শহরের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করেছে। তবে এই খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক নির্দেশনা নিশ্চিত করা জরুরি।