দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, অফিসের কাজ কিংবা বিনোদনের ফলে অনেকেই রাত ১১টা বা তারও পরে রাতের খাবার খেয়ে থাকেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই অভ্যাস শরীরের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে নিয়মিত রাতে দেরিতে খাবার খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি ও হৃদরোগের ঝুঁকি:
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে দেরিতে খায়, তাদের শরীরে বেশি ক্যালরি জমে এবং এটি ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়। রাতে খাবার হজম হতে সময় নেয় এবং তা চর্বি হিসেবে জমে যায়। ফলে ধীরে ধীরে শরীরে অবাঞ্ছিত ওজন বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, রাতে দেরিতে খাবার খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মতো হরমোনের সমস্যা হতে পারে, যা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ঘুমের ব্যাঘাত:
খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়লে শরীরের বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। ২০১৫ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে দেরিতে খায়, তারা অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখতে বেশি প্রবণ। খাবার হজম করতে শরীর বিশ্রাম নিলে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
দুর্বল হজম:
রাতে দেরিতে খাবার খেলে হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। যখন আমরা শুতে যাওয়ার আগেই খাবার খাই, তখন পাকস্থলী হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না, যার ফলে অম্লতা, গ্যাস, বুক জ্বালা, এবং বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী এই অভ্যাস পাকস্থলীর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি:
রাতে দেরিতে খাবার খাওয়ার ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার রাতে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস:
নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না খাওয়া শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরির সম্ভাবনা বাড়ায়, যা কোষের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, এবং ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
লাবণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া:
রাতে দেরি করে খাওয়ার ফলে বৃদ্ধিজনিত হরমোনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, যা শরীরের লাবণ্য নষ্ট করে দিতে পারে।
সুস্থ থাকার জন্য আদর্শ রাতের খাবারের সময়:
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, রাতের খাবারের জন্য আদর্শ সময় হলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে। এই সময়ে খাওয়ার ফলে শরীর ঘুমানোর আগে খাবার হজম করতে পারে। খাবারে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন, এবং খাওয়ার পরপরই শোয়া থেকে বিরত থাকুন, কিছু সময় হাঁটুন।
সুস্থ জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক সময়ে সুষম খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাই রাতের খাবারের সময়সীমা ঠিক করে সুস্থ জীবনযাপন করুন।