সকল খবর বিদেশের খবর

রহস্যে ঘেরা তিন স্থান: ইস্টার দ্বীপ, নাজকা লাইনস ও অ্যারিয়া ৫১

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৯-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৮২

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কিছু স্থান রহস্য, গুজব এবং অজানা ইতিহাসের কারণে মানুষের কল্পনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ইস্টার দ্বীপের মোয়াই মূর্তি, পেরুর নাজকা মরুভূমির রেখাচিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিয়া ৫১-এর মতো জায়গাগুলো আজও বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়। এসব স্থানের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি, যা আমাদের কৌতূহলকে জাগিয়ে রাখে।  

ইস্টার দ্বীপ: মোয়াই মূর্তির নির্মাণ রহস্য  

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত ইস্টার দ্বীপ (রাপা নুই) চিলির মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১,২৮৯ মাইল দূরে অবস্থিত। এই দ্বীপটি তার ৮৮৭টিরও বেশি মোয়াই মূর্তির জন্য বিখ্যাত। পাথরের তৈরি এই বিশাল মূর্তিগুলোর উচ্চতা ১৩ থেকে ৩৩ ফুট এবং ওজন প্রায় ৮০ টন পর্যন্ত। গবেষকদের ধারণা, এগুলো দ্বীপের পূর্বপুরুষদের সম্মান জানাতে তৈরি করা হয়েছিল।  

ইস্টার দ্বীপের সবচেয়ে বড় রহস্য হলো এর সমৃদ্ধ সভ্যতা কীভাবে ধ্বংস হয়ে গেল। ১৭২২ সালে ডাচ নাবিক জ্যাকব রোগেভিন দ্বীপে পৌঁছানোর সময় এখানে খুব কম মানুষ বসবাস করছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মোয়াই মূর্তি তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে গাছ কাটার ফলে বনাঞ্চল উজাড় হয়, মাটি ক্ষয় হয় এবং খাদ্যসংকট শুরু হয়। এছাড়াও, ইঁদুরের অতিবৃদ্ধি দ্বীপের পরিবেশকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে। আজ ইস্টার দ্বীপ চিলির অংশ এবং একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, তবে এর রহস্য আজও অমীমাংসিত।  

নাজকা লাইনস: পেরুর মরুভূমির রহস্যময় শিল্পকর্ম  
পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের নাজকা মরুভূমিতে অবস্থিত নাজকা লাইনস পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রায় ১৭০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই রেখাচিত্রগুলো প্রাণী, গাছপালা এবং জ্যামিতিক নকশার বিশালাকার ভূমিচিত্র। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো বানর, হামিংবার্ড, মাকড়সা এবং কনডরের চিত্র।  

নাজকা লাইনস তৈরি করতে প্রাচীন নাজকা সভ্যতা মরুভূমির লালচে পাথর সরিয়ে নিচের ফ্যাকাশে মাটিকে উন্মোচন করেছিল। এই রেখাগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অক্ষত রয়েছে, কারণ নাজকা মরুভূমিতে বৃষ্টি প্রায় হয় না। তবে এগুলোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। কিছু তত্ত্ব অনুযায়ী, এগুলো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ক্যালেন্ডার বা ধর্মীয় আচারের অংশ হতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এগুলো ভিনগ্রহবাসীদের জন্য নেভিগেশন চিহ্ন হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।  

অ্যারিয়া ৫১: রহস্যে মোড়ানো সামরিক ঘাঁটি  
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা মরুভূমিতে অবস্থিত অ্যারিয়া ৫১ একটি গোপনীয় সামরিক ঘাঁটি, যা দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ভিনগ্রহবাসী সংক্রান্ত গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। এই ঘাঁটিটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী পরিচালিত একটি গোপন গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে শীতল যুদ্ধের সময় স্টেলথ প্রযুক্তির বিমান পরীক্ষা চালানো হতো।  

অ্যারিয়া ৫১ নিয়ে প্রচলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হলো, এখানে ভিনগ্রহের মহাকাশযান এবং ভিনগ্রহবাসীদের দেহ নিয়ে গবেষণা করা হয়। ১৯৪৭ সালে রসওয়েল, নিউ মেক্সিকোতে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএফওর ধ্বংসাবশেষ এখানে আনা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব গুজব অস্বীকার করে আসছে, তবুও অ্যারিয়া ৫১ রহস্য এবং কৌতূহলের কেন্দ্র হয়ে রয়েছে।  

উপসংহার  
ইস্টার দ্বীপ, নাজকা লাইনস এবং অ্যারিয়া ৫১—এই তিনটি স্থান পৃথিবীর রহস্যময় ইতিহাস এবং অমীমাংসিত প্রশ্নের প্রতীক। এগুলো শুধু বিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদদেরই নয়, সাধারণ মানুষের কৌতূহলকেও জাগিয়ে তোলে। আজও এই স্থানগুলোর রহস্য উন্মোচিত হয়নি, যা আমাদের কল্পনাকে নতুন করে উসকে দেয়।