রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময়ের রোজার পর শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার, হজম সঠিকভাবে করা, এবং সুস্থ ও সচল থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তাই ইফতারের খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোজায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম খাবার খাওয়া উচিত, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি না পায়। এমনকি অতিরিক্ত খাবারের কারণে হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই ইফতারের সময় খাবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত পানি ও স্বাস্থ্যকর পানীয়
সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, তাই ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। পানীয় হিসেবে খেজুর ভেজানো পানি, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, কমলার রস বা তাজা ফলের রস শরীরকে সতেজ রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। খেজুর ভেজানো পানি দ্রুত শক্তি যোগায় এবং হজমে সহায়তা করে। ডাবের পানি শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে, যা রোজা ভেঙে শরীরের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
খেজুর: শক্তির উৎকৃষ্ট উৎস
খেজুর রোজাদারদের জন্য আদর্শ খাবার। এটি দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা সারাদিনের রোজার পর শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে প্রচুর ফাইবার থাকায় এটি হজমের জন্য উপকারী এবং শরীরে তাড়াতাড়ি শক্তি প্রদান করে। তাই ইফতার শুরুতেই একটি খেজুর খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
তাজা ফল: ভিটামিনের উৎস
ইফতারে তাজা ফল রাখা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তরমুজ, বাঙ্গি, আপেল, কলা, পেঁপে, আঙুর, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি ফল শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক। তরমুজ ও বাঙ্গি শরীরে পানির অভাব মেটায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের তাজা ভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। আপেল ও কলা প্রাকৃতিক চিনি ও ফাইবার সরবরাহ করে, যা শক্তির পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং দীর্ঘসময় শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: শক্তি ধরে রাখবে
প্রোটিন শরীরের পেশি সুস্থ রাখে ও দীর্ঘসময় শক্তি সরবরাহ করে। তাই ইফতারে সিদ্ধ ডিম, গ্রিলড বা সিদ্ধ মুরগি, বেকড মাছ, দই ও ছানা খেতে পারেন। প্রোটিন শরীরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা সারাদিনের রোজার পর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শর্করা ও আঁশযুক্ত খাবার
ইফতারে ছোলা রাখা একটি ভালো অভ্যাস। এটি প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রনের উৎস। তবে অতিরিক্ত মসলা বা ঝাল দিয়ে রান্না না করে সহজভাবে খাওয়া উত্তম। এছাড়া ওটস খাওয়া শরীরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। ওটসে থাকা আঁশ শরীরকে দীর্ঘসময় সতেজ রাখে এবং হজমে সাহায্য করে।
বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার
কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, সূর্যমুখী ও তিসির বীজে প্রচুর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবার থাকে, যা দীর্ঘসময় শক্তি ধরে রাখতে সহায়ক। বাদাম ও বীজ শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে।
দই ও লাবান: হজমের সহায়ক
দই হজমের জন্য বেশ উপকারী, কারণ এতে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যা পেট সুস্থ রাখে। লাবান বা টক দইয়ের শরবত শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ইফতারে দই খেলে পেটের সমস্যা কমে এবং শরীর সতেজ থাকে।
সুস্থ থাকতে কী খাবেন?
রমজানে সুস্থ থাকতে হলে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, ঝাল মশলা, এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। বরং স্বাস্থ্যকর খাবার, পরিমিত পুষ্টি এবং প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেলে রোজা পালন করা সহজ ও স্বাস্থ্যকর হবে। ইফতারের সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে এবং আপনার পুরো রোজার মাসটি সুস্থ ও শক্তিতে ভরা যাবে।
এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা ও বিশ্রাম নিশ্চিত করে রোজার মাসে শরীরকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখা সম্ভব।