জীবনযাত্রা খাবার-দাবার

রমজানে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি !

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১১-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৩১

পবিত্র রমজান মাস এলেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রৌহা গ্রামের জেসি এগ্রো ফার্মের মালিক মো. এরশাদ উদ্দিন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি রমজান মাসজুড়ে মাত্র ১০ টাকা লিটারে নিজের খামারের গরুর খাঁটি দুধ বিক্রি করছেন। এতে এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ সহজেই দুধ কিনতে পারছেন।  

রমজানের প্রথম দিন ২ মার্চ সকালে করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামে এরশাদ উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত জেসি এগ্রো ফার্মে এই দুধ বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো রমজান মাসজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিদিন ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করা হবে। তবে একজন ব্যক্তি দৈনিক সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন। গত চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও এরশাদ উদ্দিন তার খামার থেকে উৎপাদিত দুধ এভাবে বিক্রি করছেন।  

এরশাদ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা। পাঁচ বছর আগে তিনি নিজ এলাকায় জেসি এগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে দুগ্ধ ও মোটাতাজাকরণের তিন শতাধিক গরু রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০টি গরু দুধ দিচ্ছে। খামার থেকে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ রমজান মাসে দুধের উচ্চমূল্যের কারণে দুধ কিনতে পারেন না। তাদের কথা ভেবেই খামারটি শুরু করার পর থেকেই প্রতিবছর রমজান মাসে দুধ ১০ টাকা লিটারে বিক্রি করে আসছেন এরশাদ উদ্দিন।  

দুধ নিতে আসা পার্শ্ববর্তী নাহিরাজপাড়া গ্রামের আলাল মিয়া বলেন, "গত চার বছর ধরে রমজানের সময় এখান থেকে ১০ টাকা লিটারে দুধ নিচ্ছি। সকালে এসে ১০ টাকা দিয়ে এক লিটার দুধ কিনছি। আমরা অনেক খুশি, কারণ আমাদের মতো গরিব মানুষের ১০০ টাকা লিটার করে বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব না।"  

নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের মোহাম্মদ রবিউল আওয়াল বলেন, "বাজারে সব কিছুরই মূল্য অনেক। রমজানে ১০০ টাকা লিটার করে দুধ কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরশাদ ভাই গত চার বছর ধরে ১০ টাকা লিটারে দুধ দিচ্ছেন। এই দুধ দিয়েই আমরা সেহরি খাব। আমাদের সকল বিপদেই এরশাদ ভাই পাশে থাকেন।"  

জেসি এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক হোসেন মোহাম্মদ রিয়াদ জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের মধ্যে নামমাত্র মূল্যে তিন হাজার লিটার দুধ বিক্রি করছেন এরশাদ উদ্দিন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে চড়ামূল্যের দুধ কেনা দরিদ্র মানুষের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তাই কম দামে দুধ পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে। তবে কারও কাছে টাকা না থাকলে তাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।  

জেসি এগ্রো ফার্মের মালিক মো. এরশাদ উদ্দিনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হলে তিনি জানান, "রমজান মাসে দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। এক লিটার দুধ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাই নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়টা চিন্তা করেই তাদের জন্য পাঁচ বছর ধরে রমজান মাসে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করে আসছি। প্রথম রমজান থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এ উদ্যোগ শুরু করার সময়ে আমি ভেবেছিলাম, দুধ ফ্রি দেব। কিন্তু পরে ভাবলাম, রমজান মাসে দুধ ফ্রি দিলে কে কী মনে করবে। তাই আমি সামান্য মূল্যে ১০ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"  

উল্লেখ্য, মো. এরশাদ উদ্দিন নিজের নামে একটি মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। তিনি এলাকার হতদরিদ্র, প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। মানুষের যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। এর আগে গত বছর দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য ডেইরি আইকন সম্মাননা পেয়েছিলেন মো. এরশাদ উদ্দিন।  

এরশাদ উদ্দিনের এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার মানবিক এই প্রচেষ্টা রমজানের পবিত্রতা ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।