পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের জবেরপুর গ্রামের শতবর্ষী রইচ উদ্দিন জমি বিক্রির ৩৮ বছর পর বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ও সন্তোষ প্রামাণিক ২৭ শতক জমি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু দলিলে ভুলবশত বিক্রি করা জমির দাগ নম্বর ৬৬৩-এর বদলে উঠেছে ৬৭৭ নম্বর দাগ, যা রইচ উদ্দিনের বাড়ির জমি। এখন ক্রেতার বংশধররা ওই ভুল দাগ নম্বরের জমি দাবি করছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা করে দলিল সংশোধন করে ডিগ্রি পেলেও ক্রেতাপক্ষ তা মানছে না। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে রইচ উদ্দিন ও তার ছেলে আশরাফুল ইসলামকে হয়রানি করা হচ্ছে।
১৯৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি রইচ উদ্দিন ও সন্তোষ প্রামাণিক উথুলী মৌজার ৬৬৩ নম্বর দাগের ২৭ শতক ফসলি জমি বিক্রি করেন একই গ্রামের আফসার শেখ ও আছিয়া বেগমের কাছে। দলিল লেখকের ভুলে জমির দাগ নম্বর ৬৬৩-এর বদলে ৬৭৭ নম্বর দাগ উল্লেখ করা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লেখাপড়া না জানায় বিষয়টি তখন কেউই ধরতে পারেননি। ৩৮ বছর ধরে ৬৬৩ নম্বর দাগের জমি ভোগদখলের পর ২০১৪ সালে আফসার শেখের বংশধররা জমি খাজনা খারিজ করতে গিয়ে দলিলে ভুল দাগ নম্বরের বিষয়টি জানতে পারেন। তখন তারা দলিলে উল্লিখিত ৬৭৭ নম্বর দাগের জমি দাবি করেন।
রইচ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, "আমি তাদের বলেছি, দলিলে দাগ নম্বর ভুল হয়েছে। তোমরা দলিল সংশোধন করে নাও। কারণ ৬৭৭ নম্বর দাগে ২৭ শতক জমি তোমরা পাবে না। এই দাগে মোট ৪১ শতক জমি রয়েছে। তার মধ্যে আমার বাবার সোয়া ১৩ শতক জমি আছে। বাকি জমি অন্য ওয়ারিশদের।"
২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি রইচ উদ্দিন ও সন্তোষ প্রামাণিক পাবনার আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করেন। ২০২৯ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত তাদের পক্ষে ডিগ্রি দেন এবং দলিলে ৬৭৭ নম্বর দাগের স্থলে ৬৬৩ নম্বর দাগ সংশোধনের আদেশ দেন। কিন্তু ক্রেতাপক্ষ আদালতের এই রায় মানেনি। উল্টো তারা আপিল করেছে এবং রইচ উদ্দিন ও তার ছেলেকে নানাভাবে হয়রানি করছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, "আমার বাবা একশ’ বছরের বেশি বয়সী। তিনি খুব ভেঙে পড়েছেন। বিবাদীপক্ষ এলাকার প্রভাবশালী ও ধনী। তারা চ্যালেঞ্জ করেছে, যেকোনো মূল্যে ৬৭৭ নম্বর দাগে আমাদের বাড়ির জমি তারা নেবে।"
অভিযুক্ত আমির হোসেন বলেন, "তারা জাল দলিল করে জমি খারিজ করেছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা শালিশে বসেনি। এখন আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে।"
চাটমোহর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিল বলেন, "বাদি বা বিবাদি পক্ষ কেউ যদি আমার রায়ে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-এর কাছে আপিল করতে পারবেন। আদালতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।"
এদিকে, শতবর্ষী রইচ উদ্দিন বলেন, "আমি ৬৭৭ নম্বর দাগে জমি বিক্রি করিনি। বিক্রি করেছি ৬৬৩ নম্বর দাগে। সেখানে তারা ৩৮ বছর ধরে ভোগদখল করছে। এখন আমার বাড়ির জমি দাবি করছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।"
এখন রইচ উদ্দিন ও তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের সংগ্রাম শুধু জমির মালিকানা রক্ষার জন্য নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যও। স্থানীয়রা জানান, এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।