অন্যান্য খবর আইন-আদালত

আবরার মামলায় হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায় !

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৬-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭৬

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন, নূর মোহাম্মদ আজমী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ উপস্থিত ছিলেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতে ছাত্রলীগের একদল কর্মী তাকে হলের কক্ষে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগ গঠন করেন। এরপর ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জudge ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

নিম্ন আদালতের রায় পর্যালোচনার জন্য ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়। গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। আজ রায়ে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং এস এম মাহামুদ সেতু (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ জন হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্য আবদুর রহমান আনিক (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মো. আশরাফুল ইসলাম (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মো. ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মো. রাশেদুল ইসলাম (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) এবং সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ)।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয় এবং শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধের দাবি ওঠে। আজকের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশা প্রকাশ করেছেন আবরারের পরিবার ও সাধারণ মানুষ।