২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে অনড় অবস্থান নিয়েছে দলটি। তবে বিএনপির আশঙ্কা, একটি বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চূড়ান্ত করার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বা সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা ঘোষণা আসেনি। বিষয়টি নিয়ে দলের তৃণমূলসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “যত ষড়যন্ত্রই হোক, জাতীয় নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও খারাপের দিকে যাবে।”
দলটির অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ‘মবোক্র্যাসি’, হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে, যাতে করে দেশে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে পরিবেশ নেই—এমন প্রচার চালানো যায়। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
এদিকে নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপিতে প্রার্থী বাছাই, দল গোছানো ও ইশতেহার প্রস্তুত করার কাজ পুরোদমে চলছে। সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার প্রার্থী মনোনয়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। অতীতে আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন—এমন কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে বিএনপি এককভাবে না জোটগতভাবে নির্বাচন করবে, সে বিষয়েও আলোচনাসভা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি, তবে এখনো জোট কাঠামো বা আসন বণ্টন নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিভিন্ন কৌশলে দেশে অস্থিরতা তৈরি করে বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে—নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এটি মূলত নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরও বলেন, “ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।”
দলীয় সূত্রমতে, ‘জুলাই সনদ’ ও নির্বাচন সংক্রান্ত সরকারি ঘোষণা এখনো অনিশ্চিত থাকায় পুরো নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় দ্বিধা-সংশয় রয়ে গেছে। তবে বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, পরিস্থিতি যাই হোক, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ছাড় দেওয়া হবে না।