অন্যান্য খবর ধর্ম ও দর্শন

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ৬-৯-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৮২

আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত, কারণ এই দিনেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং একই দিনে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা দিনটি যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে।

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোলজুড়ে আগমন ঘটে এই মহান মানবের, যিনি পরবর্তীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির মুক্তির দূত হিসেবে নবুয়ত লাভ করেন। তিনি নবুয়ত লাভের পূর্বেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ৪০ বছর বয়সে তিনি মহানবী হিসেবে মনোনীত হন।

তার আগমনের আগে আরব জাহান ছিল অরাজকতা, হানাহানি ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। মানুষ মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল, নারীর প্রতি ছিল চরম অবজ্ঞা, সমাজে চলছিল অবিচার ও সহিংসতা। এই অন্ধকার যুগে মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে আলোর পথ দেখাতে প্রেরণ করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ন্যায়, শান্তি, সাম্য ও মানবিকতার সমাজ।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে দেশব্যাপী সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ইসলামিক সংগঠন ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নানা ধর্মীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রয়েছে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান ও কোরআনখানি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে এবং বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ইসলামী বইমেলা।

এ দিন উপলক্ষে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্বগণ বাণী দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, “মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করলেই মানবজাতির ইহকাল ও পরকালের মুক্তি সম্ভব।” তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কামনা করেন।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, “মহানবী (সা.) যে সাম্য, ন্যায় ও মানবতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা আজকের সমাজে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। মদিনা সনদের মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, “দুঃখী, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনন্য। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।”

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ আদর্শ অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব নয়। তাকে খণ্ডিতভাবে অনুসরণ করলে প্রকৃত কল্যাণ লাভ করা যাবে না।”

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) শুধু উৎসবের দিন নয়, বরং এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ অনুসরণের গুরুত্ব। সমাজে ন্যায়বিচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, দয়া ও সহানুভূতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তার জীবন থেকেই নিতে হবে শিক্ষা। মুসলিম উম্মাহর কাছে এ দিনটি তাই আত্মশুদ্ধি, ভালোবাসা ও নবীপ্রেমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতীক।