বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মীদের পোশাক সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বিতর্কিত নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, “বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগীয় সভায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অফিস সময়কালে শালীন পোশাক পরিধানের বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে এটি ছিল পুরোপুরি প্রস্তাবনা পর্যায়ে। কোনোভাবেই এটি বাধ্যতামূলক নির্দেশনা কিংবা নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচ্য নয়।”
তিনি আরও জানান, গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের দৃষ্টিগোচর হয়। বিদেশ সফরে থাকা অবস্থায় তিনি খবরটি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।
মুখপাত্র বলেন, “গভর্নরের নির্দেশে ওই অভ্যন্তরীণ আলোচনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা থাকে, তবে তা অফিসিয়াল সার্কুলার আকারে প্রকাশ করা হবে।”
এর আগে, বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে একটি সংবাদমাধ্যমে ‘নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে ২১ জুলাই তারিখে একটি অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা জারি করা হয়, যেখানে নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না, ফরমাল পোশাক, সাদামাটা হিজাব পরার কথা বলা হয়। ছোট হাতা, স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই সার্কুলারকে ‘পরামর্শমূলক’ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এতে পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না, বরং অফিস পরিবেশে অতিরিক্ত জাঁকজমকপূর্ণ বা অনুপযুক্ত পোশাক নিরুৎসাহিত করাই ছিল আলোচনার উদ্দেশ্য।
ঘটনার প্রেক্ষিতে আরিফ হোসেন খান জানান, “বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং পেশাগত মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রতিষ্ঠান কোনোভাবে কর্মীদের ওপর বাধ্যতামূলক পোশাক চাপিয়ে দেবে না।”
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের প্রস্তাব প্রকাশ্যে আসার আগে বিষয়টি আরও সতর্কতার সঙ্গে উপস্থাপন করা উচিত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গভর্নরের স্পষ্ট অবস্থান এবং দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।