বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে কাতারের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২৩ এপ্রিল) দোহায় আয়োজিত ‘কাতার ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এখন নতুনভাবে ব্যবসায়িক পরিবেশে ফিরে এসেছে এবং তা অনেক বড় পরিসরে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি দুর্নীতিমুক্ত, বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।” তিনি কাতারের বিনিয়োগকারীদের এই অভিযাত্রায় অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি অতীতের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের গল্প শোনান— কীভাবে বাংলাদেশ নরওয়ের টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরকে দেশের বাজারে প্রবেশে উৎসাহিত করেছিল। পরবর্তীতে সেটিই কোম্পানিটির সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্পে রূপ নেয়। “যদি কখনো বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা ভাবেন, তবে এখনই তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়,”— জোর দিয়ে বলেন ড. ইউনূস।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, যিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬০০ মিলিয়নে। কাতার এনার্জির বকেয়া ২৫৪ মিলিয়ন ডলারও ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে সরকারের সুপরিকল্পিত উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগে লাভজনক সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে।”
বিডা’র (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে কাতারের উদ্যোক্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে দেশের বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশ এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম, যিনি সমাপনী বক্তব্যে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের এ উদ্যোগটি কাতারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নতুন বাংলাদেশ গঠনে এ ধরনের আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তাতে সন্দেহ নেই।