অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: বেক্সিমকো গ্রুপের চারটি শাখা কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, ফলে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ইয়ার্ন ইউনিট-২, টেক্সটাইল, ডেনিম ও নিটিং বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে রূপগঞ্জে অবস্থিত ইয়ার্ন ইউনিট-১ চালু থাকবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে হতাশা এবং অস্থিরতা বাড়ছে।
গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানা পরিচালনা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এর পর থেকেই বেশ কয়েকটি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্রমিকরা তাদের কাজ পুনরায় চালুর জন্য আন্দোলন শুরু করে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর সরকার বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানা ব্যবস্থাপনা নিয়ে পৃথক একটি কমিটি গঠন করেছে, যাতে সরকারের প্রতিনিধিরা বিষয়টির ওপর নজর রাখছেন।
কমিটির অন্যতম সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করেছেন যে, বেক্সিমকো গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “বেক্সিমকো গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে। টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে বেক্সিমকো ২৮,৫৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বিপরীতে ১৬টি প্রতিষ্ঠান কাগজে-কলমে থেকে গেলেও বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব নেই।”
তিনি আরও বলেন, “এই ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে, যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।” সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকারের সিদ্ধান্তে ১২টি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, সরকার বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকের বন্ধকি শেয়ার বিক্রিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বেক্সিমকো গ্রুপের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আরও একবার প্রশ্ন উঠেছে, দেশের বৃহত্তম শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি কেন এত সংকটে পড়ল। আগামী দিনগুলোতে এটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং শ্রমিকদের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।