অন্যান্য খবর আইন-আদালত

দেওয়ানি মামলার সাক্ষ্য পদ্ধতিতে আসছে বড় পরিবর্তন!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৭-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৩১

দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব রোধে দেওয়ানি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পদ্ধতিতে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। এখন থেকে বাদী ও বিবাদীকে আর সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মৌখিকভাবে জবানবন্দি দিতে হবে না। এফিডেভিট আকারে দাখিলকৃত লিখিত বক্তব্যই সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সেই ভিত্তিতে হবে জেরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন এই পদ্ধতির মাধ্যমে আদালতের মূল্যবান সময় যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিও সম্ভব হবে। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তিও কমবে।

বর্তমানে দেশে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭টি। এর মধ্যে বিচারিক আদালতে রয়েছে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭টি এবং হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে রয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মামলা। নতুন প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো কার্যকর হলে মামলাজট অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধনীর খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে তা কার্যকর হবে।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী, মামলার সমন ইস্যু করা যাবে এসএমএস, ভয়েস কল, ই-মেইল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। যুক্ত হচ্ছে অনলাইনে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগও। মামলার রায় বাস্তবায়নের জন্য আলাদা মামলা করার প্রয়োজন হবে না; আবেদন করলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এছাড়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘সংশোধনী কার্যকর হলে সাক্ষ্যগ্রহণে সময় অনেক কমে যাবে, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়বে। এতে বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন।’’

অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু বলেন, ‘‘বর্তমানে মামলার সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে সময়োপযোগী এই সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল যুগে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে মামলার গতি আরও বাড়বে।’’

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বহু পুরনো দেওয়ানি মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। সিলেটের গোয়াইনঘাটে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা ১৯৫৮ সালে শুরু হয়ে নিষ্পত্তি হয় ২০২১ সালে। প্রায় ৬৩ বছর পর মামলার রায় কার্যকর হয়। এমন দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে নতুন আইনি সংস্কার অপরিহার্য বলে মনে করছেন সবাই।

এদিকে, বাংলা ভাষা প্রচলন আইন পাসের ৩৮ বছর পার হলেও এখনো দেওয়ানি কার্যবিধির মূল আইন ইংরেজিতেই রয়ে গেছে। একাধিক বিচারপ্রার্থী অভিযোগ করেছেন, আইন ইংরেজিতে হওয়ায় তা বোঝা কঠিন হয় এবং আইনজীবীকে আলাদা ফি দিয়ে বুঝতে হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আইনটি বাংলায় রূপান্তর হলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে।