বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শাসনে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো পুনর্গঠন করতেই বিএনপি প্রস্তুত হচ্ছে।”
আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলন ঘিরে জেলার পাঁচ উপজেলা ও তিন পৌরসভা থেকে ৮০৮ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সাত বছর আট মাস পর জেলার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, “২৪ জুলাই ঢাকার রাজপথে হাজারো তরুণ, যুবক, নারী ও শিশু গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়েই গত ১৫ বছরে আমাদের ১২ জন সহকর্মী শহীদ হয়েছেন। শুধু জুলাই মাসেই প্রাণ দিয়েছেন চারজন। আওয়ামী লীগ এই জেলায় ৭৫টি মামলা দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার নেতাকর্মীকে হয়রানি করেছে। কেউ পালিয়ে ছিলেন, কেউ ধানক্ষেতে লুকিয়ে থেকেছেন, কেউ আবার কারাভোগ করেছেন।”
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ‘টেকসই গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফখরুল বলেন, “দেশের মানুষ আজ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার নেতৃত্বেই আগামী দিনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হবে।”
তিনি বলেন, “আজকের সম্মেলন আমাদের কাছে যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনার। আনন্দের কারণ, আমরা আজ মুক্ত পরিবেশে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারছি। আর বেদনার কারণ—অনেক প্রিয় সহযোদ্ধা আজ আমাদের মাঝে নেই।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “জিয়া একটি দল গড়ে দিয়েছিলেন, যে দল গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে এবং প্রাণ দিয়েছে।” একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তিনি দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন এবং গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করে চলেছেন।”
দলের বর্তমান রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছে এবং ভিশন–২০৩০ এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা দিয়েছে। এখন ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে ভেঙে পড়া অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে কাজ করছে দলটি।”
সম্মেলনের শুরুতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান দুদু ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। সকাল থেকেই সম্মেলনস্থল ছিল উৎসবমুখর পরিবেশে মুখরিত।