ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অবরোধ এবং মানবিক সহায়তা বন্ধের জেরে চরম খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের এই অঞ্চলটি। এই সংকটের ভয়াবহতার মধ্যে মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক শিশুর অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) গাজা সিটির প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় শিশুটি মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছিল।
রোববার (২০ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, একই দিন ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১৬ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি বেসরকারি ত্রাণ সংস্থা—গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অঞ্চলটিতে অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। হাসপাতালগুলোতে খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, “শুধু শনিবার আমাদের হাসপাতালে অনাহারে অন্তত দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে একজন নবজাতক।”
খান ইউনিস ও রাফাহ অঞ্চলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ব্যাপক হতাহতের খবর দিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “মানুষ একটু খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়ায়, কিন্তু অনেকেই আর জীবিত ফিরে আসে না।”
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশন। সংস্থাটির মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন, “গাজা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড আরও কঠোর ভাষায় বলেন, “গত ১৪২ দিন ধরে আমরা একটি ত্রাণবাহী ট্রাকও গাজায় ঢুকাতে পারিনি। এটা কল্পনাতীত।”
অপরদিকে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, মিশরের রাফাহ সীমান্তে তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকলেও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো গাজায় প্রবেশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—“সীমান্ত খুলে দিন, অবরোধ তুলে নিন, এবং আমাদের মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দিন।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধ, সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে বাধা দিয়ে গাজাকে একটি পরিকল্পিত মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতি এখনই থামাতে না পারলে তা এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিতে পারে।