শেরপুরের গারো পাহাড়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন একের পর এক অভিযান চালালেও কিছুতেই থামছে না বালু লুটপাট। নদী-নালা, খাল-বিল, ঝর্ণা, ফসলি জমি ও পাহাড়ের পাড় কেটে প্রতিনিয়ত চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
জানা গেছে, শেরপুরের গারো পাহাড় সংলগ্ন সীমান্তবর্তী ভোগাই, চেল্লাখালি, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পাঁচটি ইজারাকৃত মহাল ছাড়াও ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে বালুদস্যুরা।
প্রশাসনের কঠোর অভিযান
গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ঝিনাইগাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় অবৈধভাবে বালু বহনকারী একটি গাড়ি আটকসহ চার শ্রমিককে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে, এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বালুদস্যুরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বন বিভাগের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বনাঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে তাঁরা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। ময়মনসিংহ বন বিভাগের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এসডি মো. তানভীর আহমেদ ইমন জানান, লোকবল সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যার কারণে তিনি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে, লোকবল বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বালু উত্তোলনের বর্তমান চিত্র
জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ইজারা বহির্ভূত এলাকাগুলো থেকেও বালু উত্তোলন করা হলেও, তখন এটি শুধুমাত্র নদীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বর্তমানে অসংখ্য নতুন বালু মহাল গড়ে ওঠায় এ লুটপাটের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনাঞ্চল, নদীর পাড়, ফসলি জমি, খাল-বিল এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
সরকারের রাজস্ব খাতে বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, আগে নীতিমালার কিছুটা অনুসরণ করা হলেও বর্তমানে তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হলেও বালু লুটপাট বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার ববি বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমি যোগদান করেছি এবং বালু লুটপাট বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদ বলেন, ‘অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ২ ফেব্রুয়ারি সোমেশ্বরী নদীর রাঙ্গাজান ও কর্ণঝোড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তবে, স্থানীয়দের মতে, প্রশাসন অভিযান পরিচালনার পরপরই আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়ে যায়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের যন্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তবুও থামছে না বালু লুটপাট। প্রশাসন বলছে, বালুদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করতে জনগণের সহায়তা প্রয়োজন।